ধারাবাহিক প্রতিবেদনে আজ প্রথম পর্ব
মোঃ গোলাম কিবরিয়া: চোরের দশ দিন গৃহস্তের একদিন। সবাই বলে আজিজের সাথে জীন আছে। সেই জীনে গায়েব থেকে হিরা স্বর্ণ এনে দেয়। এগুলো বিক্রি করেই আজিজ নাকি শতশত কোটি টাকার মালিক। একসময় আজিজের কিছু ছিলনা। রাতারাতি কয়েকটি বিশাল অট্টালিকা সহ গড়ে তুলেছে কলকারখানা। কথা বলছি গাজীপুর মহানগরীর ৩৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল আজিজের।
সে একজন বহুরূপী প্রকৃতির লোক তার নামে এলাকায় অভিযোগের শেষ নেই। কখনো হেফাজত ইসলাম, কখনো বিভিন্ন ইসলামিক দলের পরিচয় দিয়ে থাকে এই ব্যক্তি। সম্প্রতি হেফাজত ইসলামের বেশ কিছু বড় ধরনের নেতাদেরকে নিয়ে তার বাসায় বৈঠক করেছে বলে জানায় স্থানীয় লোকজন। তাদের মধ্যে অন্যতম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুজ্জামান সেলিম অন্যজন গাছা ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইফতেখার আলম মনির।
প্রতিবছর একদিকবার হেফাজতের বড় বড় নেতারা আসে তাদেরকে ওয়াজ মাহফিলের দোহাই দিয়ে তার বাসায় গোপন মিটিং করে এবং সে ফেসবুকে হেফাজতকে মাঠে নামানোর জন্য উস্কানিমূলক পোস্ট করে থাকে। গাছা থানায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার নামে হঠাৎ করে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়ায় আজিজকে দেখে সবাই অবাক হয়। থানার কিছু অসাধু পুলিশকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে এলাকায় রাম রাজত্ব কায়েম করে হেফাজতের নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। নিজেকে সবসময় ভালো মানুষ পরিচয় দিয়ে বেড়ায় ২০১০ সালে টিনশটের ঘরে বসবাস করত এখন তার রয়েছে বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন।
বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টরি তার নামে অভিযোগ রয়েছে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করার, ২০২২ সালে সরকারী তিতাস গ্যাস অবৈধ ভাবে ব্যবহারের কারণে তাকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গ্রামের কবরস্থান নিয়ে তার নামে রয়েছে একাধিক অভিযোগ লাশ দাফন করতে হলে তাকে দিতে হয় ৪০ হাজার টাকা। তা না হলে কবর দিতে দিবে না। তার রয়েছে একাধিক বডিগার্ড ছদ্মবেশে টুপি মাথায় দিয়ে হুজুর সেজে তার আশেপাশে সবসময় থাকে।
গাজীপুর গাছায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করে নিজেকে আওয়ামী লীগ হিসেবে জাহির করতে চায়। এলাকায় সাবেক এক ছাত্র নেতা বলে আব্দুল আজিজ ওরফে আব্দুল আজিজ গং এরা কখন আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত ছিল না হঠাৎ করে স্থানীয় এমপি কে বাড়িতে দাওয়াত খাওয়াইয়া নিজেকে আওয়ামী লীগ পরিচয় দিয়ে বেড়ায় প্রকৃতপক্ষে সে একজন হেফাজত এই ডোনার।
কুনিয়া তারগাছে ২০০৭ সালেও সাধারণ একটি চাকরি করতেন বেতন পেতেন ৭০০০/- টাকা অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন কিভাবে এটাই জনমতে প্রশ্ন। এলাকাবাসীর দাবী দূর্নীতি দমন কমিশন সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলো আজিজের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে: বেরিয়ে আসবে থলের বিড়াল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই জানান দারিদ্র পরিবারে ছিলেন আঃ আজিজ আমাদের সাথেই চলাফেরা করতো ভালোমতো খেতে পারত না। সংসার চালাতে হিমসিম খেতো কিভাবে এত অল্প সময়ে শত শত কোটি টাকার মালিক হলেন কোথায় পেলেন এই টাকা।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায় আজিজের সাথে চাকরি করা এক ব্যক্তি জানান আমার বেতন ছিল ২৫০০ টাকা তখন মনিরের কার্টুন ফ্যাক্টরিতে আমি ও আজিজ একসাথে চাকরি করি আজিজের বেতন ৭০০০/– দারিদ্র্যের চপটাঘাতে সংসার চালাতে হিমসিম খেত। আজিজের স্বভাব চরিত্র ভালো না বলে জানায় তার সহকর্মীরা। পরকিয়ার জেরে দ্বিতীয় বিবাহ করতে বাধ্য হয় আজিজ। তার চরিত্র এতটাই নগন্য ছিল যে, তার প্রথম স্ত্রী তাকে ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।
নাম না জানাতে ইচ্ছুক গাছা এলাকার একজন ব্যক্তি দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশকে জানান আজিজের কক্সবাজার টেকনাফ সহ কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় সহ বিভিন্ন বর্ডার এলাকায় রয়েছে মাদকের বিশাল নেটওয়ার্ক। এসব অবৈধ ব্যবসা থেকে তার প্রতিমাসে আয় কয়েক কোটি টাকা। কিন্তু সে এমন ভাবে চলে, এমনভাবে কথা বলে, দেখে মনে হবে বিশাল কোন ভন্ডপীর হেঁটে যাচ্ছে পিছনে পিছনে তার মুরিদরা হুজুর হুজুর করছে।
আজিজ হেফাজত থেকে আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় কোটি কোটি টাকা খরচ করছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তার কাছে এ বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে সরেজমিনে গিয়ে তাকে না পেয়ে একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করলে সে প্রতিবার জানিয়ে দিতো কিছুক্ষণ পরে আমি ফোন দিচ্ছি।
আজিজের দুটি আট তালা ভবন সহ উত্তরা গুলশান-বনানীতে রয়েছে নামে বেনামে একাধিক ফ্ল্যাট। গাজীপুর ভালুকা ময়মনসিংহ রোডে রয়েছে শত শত বিঘা জমি। খরতুল এলাকায় একটি বিশাল মার্কেট, দুটি কার্টুন ফ্যাক্টরি, একটি বোতল ফ্যাক্টরি, ছোট-বড় মিলিয়ে আরো অনেক ফ্যাক্টরি ও বাড়ি জায়গার মালিক তিনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলায় মাননী প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের সোপানে কোন দুষ্কৃতিকারী ভন্ড প্রতারক হেফাজতের নামে মুখোশধারী অপরাধীদের স্থান নেই, সবাই আসবে আইনের আওতায়। এমনটাই দাবী সবার। আগে সোনার বাংলা পরে অন্যসব সাধু সাবধান।
সূত্র : দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশ ১২ /০৭/২০২৩ (প্রকাশিত)
Leave a Reply