মোঃজাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান :ফ্যাশন হলো ইংরেজি শব্দ। এর অভিধানিক অর্থ : চলা-চল ও প্রথা-পদ্ধতি। বর্তমান যুগ হলো ফ্যাশনের যুগ।কিন্তু এই ফ্যাশন তো ভাল বা মানানসই নয়,বর্তমান পরিস্থিতি হলো কুৎসিৎ ফ্যাশনের ছড়াছড়ি।আজ যে কুৎসিৎ ফ্যাশনের প্রচণ্ড তাণ্ডব,সেসব অশ্লীল ফ্যাশনের অক্টোপাসে সমাজ-জীবন বিপর্যস্ত। জাতি দিন দিন যে ভাবে নোংরা ফ্যাশনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে,যার কারণে মানুষ শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।এরুপ ফ্যাশন একটি অভিশাপ বৈ কিছু নয়।মানুষ হলো সমাজিক জীব,সমাজে বসবাসের জন্য মানুষের অনেক মৌলিক বিষয় প্রয়োজন।তার মধ্যে অন্যতম হলো পোষাক। পোষাক মানুষের ইজ্জত-অব্রুর হেফাজত করে।পোষাক বিহীন মানুষকে শালীন বলে আখ্যায়িত করা যায় না।পোষাক এর মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিত্বের পরিচয় ঘটে।পোষাকের মাধ্যমে মানুষ তার মানসিকতা ও রুচিশীলতার পরিচয় দেয়। লজ্জা হলো ঈমানের অঙ্গ। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,যার লজ্জা নেই,তার ঈমান নাই,যার লজ্জা আছে তার ঈমান আছে। লজ্জাশীলতা একটি মানবীয় সদগুণও বটে। যেমন বনের পশুর কোন লজ্জা নাই এবং লজ্জার কোন অনুভুতিও নাই।তাই এদের পোষাকের প্রয়োজন হয় না। পোষাক কেবল মানুষের জন্য। পোষাক সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,”হে বনী আদম,আমি তোমাদের জন্য পোষাক নাজিল করেছি,যেন তোমরা তোমাদের লজ্জা স্হান সমূহ ঢাকতে পার।এটা তোমাদের জন্য শরীরের আবরণ এবং সৌন্দর্য বর্ধনের উপায়।আর সর্বোত্তম পোষাক হলো তাকওয়ার পোষাক।(সুরা আ’রাফ:২৬)
বাংলাদেশ পৃথিবীর ২য় বৃহত্তম মুসলিম দেশ।এদেশের প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষ মুসলিম। সকলেই ধর্মের বিধানে আবদ্ধ। ইসলামে চিরসত্য শাশ্বত বাণীর প্রতি এদেশের মানুষ আস্হাশীল। আমরা বিশ্বাস করি, এই নিখিল বিশ্বের স্রষ্টা একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালা। তিনি নিরঙ্কুশ সর্বভৌম একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী।আর রাসুলুল্লাহ সাঃ আল্লাহর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ট নবী ও রাসুল। তার উম্মত হিসাবে তার আনিত দীন তথা ইসলামের শাশ্বত বানীর অনুসরণ এবং অনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমেই আমরা কেবল ইহকাল ও পরকালীন মুত্তি,ও কল্যান পেতে পারি, অন্যথায় নয়। আল-কুরআন ও হাদিস শরিফে আমাদের জীবন দ্বারার যাবতীয় দিক উল্লেখ রয়েছে।আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কোন অংশ ও এর থেকে বাদ পড়েনি।খাওয়া -দাওয়া,পোষাক-আষাক,চাল-চলন,নিয়ম-নীতি,রাজনৈতিক ও লেনদেন সকল বিষয়ে এই মহাগ্রন্হ আল কুরআন ও রাসুলুল্লাহ সাঃ এর হাদিসে রয়েছে।একজন মুমিন হিসাবে কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা আমাদের একান্ত প্রয়োজন।আমাদের রয়েছে নিজস্ব ইসলামি কৃষ্টি- কলচার।বলতে গেলে একথা বাস্তব সত্য যে,ইসলামি কৃষ্টি – কালচারের ন্যায় এমন মাননশীল ও রুচিসম্মত সংস্কৃতি বিশ্বের কেন জাতি দেখাতে পারবে না।এমন রুচিশীল তাহযীব-তামাদ্দুম ফেলে মুসলিম সমাজ আজ পশ্চিমাদের রীতি -নীতি ও কৃষ্টি -কালচারের প্রতি দ্রুত ছুটে চলছে।নামেমাত্র মুসলিম কর্ম ও লেবাসে পাক্কা ইহুদি- খৃষ্টান। পা থেকে মাথা পর্যন্ত কোথাও মুসলিম এর পরিচয় নায়।বিভিন্ন রকমের ফ্যাশনের তলে যুবসমাজ আজ ধ্বংসের অতল গহ্বরে।স্বজাতীয় রুচিসম্মত ফ্যাশন ফেলে দিয়ে,অতীব সুন্দর ইসলামের মনোরম তাহযীম- তামাদ্দুন ভুলে গিয়ে, নিত্য নতুন ফ্যাশন ফেলে,পশ্চাত্য পোষাক পরিধান করে কুরুচিপনার চরম অবক্ষয় ডেকে আনছে তারা আমাদের সমাজে।দিন দিন তরুণ তরুণীরা গড্ডালিকা প্রবাহে ইসলামের শাশ্বত নিয়ম নীতির প্রতি বিতশ্রদ্ব হয়ে উঠছে।নিত্য নতুন ফ্যাশন বদলের ফলে নর নারী প্রায় উলঙ্গ অবস্থায় চলাচল করতেছে।ফ্যাশন সম্পর্কে এক বিখ্যাত দার্শনিক উইলভীর মন্তব্য হলো:”ফ্যাশনের মধ্যে একটা বিশ্রী কদর্যতা রয়েছে,যা সহ্য করা যায় না।তাই প্রিতি দু”মাস অন্তর অন্তর তা বদল করতে হয়।বাস্তবতা আজ যে ফ্যাশনটা সমাজে প্রচলন দেখা যায়, অল্প কিছু দিন পরে তাকে “Old model” বলে দুরে নিক্ষেপ করা হয়।College- University, office,Other Garden and Restaurant, সর্বত্র দেখা যায় হাল ফ্যাশনের জামার ছড়াছড়ি।বর্তমানে সমুদ্র সৈকত এবং শপিং মলে এর দৌরাত্ম্য এতটা বৃদ্ধি পায় যে,কোন সুস্থ মস্তিষ্ক ও রুচিশীল মানুষের জন্য সেখানে প্রবেশব করা সম্ভব হয়ে উঠে না।এখানে তরুন তরুনীরা ও কম না। এখনকার ছেলেরা হাফপ্যান্ট,মেয়েরা সার্ট- গেন্জি,ইস্কিপ্যান্ট পড়ে চলাচল করে।এটা ফ্যাশন নামে অভিশাপ বৈ কিছু না।এখন কার যুবসমাজের হাতে রয়েছে Android phone,যার মাধ্যমে আমাদের তরুণ তরুণীরা যেমন পড়াশোনা,সংবাদপড়া ইত্যাদি ভালো কাজ করতেছে,তার চেয়ে দ্বিগুন কারাপ সাইটে ব্যবহার করছে।আর এতে যেমন বিশ্বের কোথায় কি ঘটেছে তা যেমন অতি দ্রুত জানতে পারে,তেমন অতি সামান্য পোষাক পড়ে তরুণ তরুণীরা চলাফেরা রঙঢঙ করা যায় তাও জানতে পারে।যখন মন চাই তখন দেখতে পারে হর ফ্যাশনের চ্যানেল।এতে নিজেকে সমাজকে বেহায়াপনার চরম পর্যায়ে ঢেলে সাজানো সহজ হয়ে উঠে।এই সমস্ত ফ্যাশন শুধু সমাজজীবনের অবক্ষয় ঘটাচ্ছে না,যুবক যুবতী ও তরুণ তরুণীর নৈতিক চরিত্রের বারটা বাজাচ্ছে।আজ কাল সমাজে ছেলেদের লম্বা চুল বিভিন্ন খেলোয়াড়দের মতো চুল রাখা।মেয়েদের কাটু চুল,ভ্রুপ্লাক,লম্বা লম্বা নখ রাখা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছ। নখ লম্বা করা সভ্য জাতির ফ্যাশন।নখ লম্বা করে যদি কোন জাতি সভ্য হতে পারতো,তবে বনের হিংস্র প্রাণীরা বেশী সভ্য হতো।কেননা তাদের হাত পায়ের নখ আমাদের চেয়ে অনেক বড়।কাজেই ফ্যাশন আর সভ্যতার দোহাই দিয়ে সমাজজীবনকে দূর্বিসহ না করে প্রকৃত সভ্যতার দিকেই ফিরে আসা উচিত। নখ কেটে ছোট রাখা দায়েমী সুন্নত, যা নবীজি আমল করে উম্মতকে শিক্ষা দিয়ে গেছেন।সভ্যতা তো সেটাই।আমরা সকলেই আজ ইহুদিদের অনুকরণে ব্যস্ত।মুসলমানদের এটি করা শোভনীয় নয়।মুসলমানের উচিত আল- কুরআন ও হাদিস শরিফে কি বলে,সেই অনুযায়ী চলা।রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুকরণ -অনুসরণ করবে,তার হাশর-নাশর সেই সম্প্রদায়ের সাথেই হবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই সব কর্ম থেকে বিরত রেখে,ইহুদি খৃষ্টান দের চক্রান্ত থেকে হেফাজত করে। আল কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুক। আমিন!ছুম্মা আমিন!
Leave a Reply