শেরপুরের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে অবৈধ মাছ ধরার চায়না ও কারেন্ট জাল জব্দ করে পোড়ানোর সময় সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৩ জন আহত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের ইলশাঘাট এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। আহতরা হচ্ছেন স্থানীয় মোঃ ইনসার আলীর ছেলে মোঃ ইয়াকুব আলী (৪০), মৃত ধুইলতা মিয়ার ছেলে মোঃ ছাউত মিয়া ও মোঃ শিয়ালু মিয়ার ছেলে মোঃ জবেদ আলী। তারা ৩ জনই বর্তমানে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অন্যদিকে ওই ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাথে থাকা কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। স্থানীয় ও আহতদের স্বজনরা জানায়, জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে জেলা মৎস্য অফিসের উদ্যোগে মঙ্গলবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ উজ্জল হোসেন, জেলা মৎস্য অফিসের সহকারী পরিচালক সুলতানা লায়লা তাসনীম ও সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মমতাজুন্নেছাসহ সংশ্লিষ্টরা শেরপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে চায়নাদুয়ারী ও কারেন্ট জালসহ ১০টি অবৈধ জাল জব্দ করেন। পরে সেগুলো ভাতশালা ইউনিয়নের ইলশাঘাট এলাকায় জড়ো করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতিতে পুড়িয়ে ফেলার উদ্যোগ নেন। ওইসময় স্থানীয় ইয়াকুব আলী, ছাউত মিয়া ও জবেদ আলী সেগুলো পুড়ানোর জন্য সহযোগিতা করতে পেট্রোল ও ডিজেল ঢালেন। তবে তারা নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার আগেই কেউ একজন জালে আগুন ধরিয়ে দিলে ওই ৩ জন অগ্নিদগ্ধ হয়। পরে তাদের পাশর্^বর্তী নদীর পানিতে চুবিয়ে আগুন নিভিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। এদিকে ওই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাথে থাকা কর্মকর্তাদের প্রায় এক ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে খবর পেয়ে শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ হান্নান মিয়া, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, ভাতশালা ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার ও লছমনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাইসহ অতিরিক্ত পুলিশ স্থানীয় অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা গিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করে তাদের উদ্ধার করে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।তবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল হক ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উজ্জল হোসেন জানান, নিয়ম অনুযায়ী জালগুলো জড়ো করে ব্যানার টানিয়ে ছবি ও ভিডিও করার প্রস্তুতির সময় আদালতের নির্দেশ ছাড়াই সেখানে পেট্রোল ঢেলে স্থানীয় একজন আগুন জ¦ালিয়ে দিলে সেই আগুনে ৩ জন সামান্য দগ্ধ হয়েছেন। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা করানোরও আশ^াস দেওয়া হয়েছে। তবে মৎস্য অফিস বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের কেউ আগুন দেয়নি। জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. অমিয় জ্যোতি সাইফুল্লাহ জানান, আহতদের মধ্যে ২ জনের শরীরের প্রায় ১৫-১৮ ভাগ পুড়ে গেছে, আর অপরজনের ৫/৭ ভাগ পুড়েছে। তবে তাদের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ হান্নান মিয়া জানান, খবর পেয়ে সদর থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরুদ্ধ হওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্যান্যদের উদ্ধার করেছে। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
Leave a Reply