ডেস্ক রিপোর্ট : ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে গ্রেফতার দেখিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
এর আগে, মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।মামলার তদন্তকারী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, আনার হত্যাকাণ্ডের পরপরই ঝিনাইদহের একাধিক নেতার মোবাইলে ‘মিশন সফল’ জানিয়ে আকতারুজ্জামান শাহিন খুদে বার্তা পাঠান।
জানা গেছে, আনার হত্যাকাণ্ডের পর সঞ্জীবা গার্ডেন থেকে শিমুল ভূঁইয়া শাহীনের মোবাইলে ছবি পাঠান। যেসব ছবি শাহীন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টুর মোবাইলে পাঠিয়ে বলেন, ‘আনার শেষ, মনোনয়ন কনফার্ম’।
এদিকে, ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর সঙ্গে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের রাজনৈতিক বিরোধ ছিল বলে জানিয়েছেন আনারকন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। তার সন্দেহ, বাবার হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় থেকে জেলা পর্যায়ের অনেক নেতা জড়িত।
ডরিন বলেছেন, আকতারুজ্জামান শাহিনের সঙ্গে আমার বাবার কোনো ব্যবসা ছিল না। সে আমার বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু না। আমার বাবা হত্যার সঙ্গে যত বড় নেতাই জড়িত থাকুক না কেন, আমি তাদের বিচার চাই।
মঙ্গলবার রাতে বেসরকারি একটি টেলিভিশনের টক শোতে তিনি এসব কথা বলেন।
ডরিন বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে আমার বাবার বিরুদ্ধে মনোনয়ন চেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু চাচা। তার সঙ্গে আমার বাবার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিরোধিতা রয়েছে। এমনকি সেই নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আমার বাবার বিরুদ্ধে একজন প্রার্থীকে দাঁড় করিয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয় পর্যায় থেকে জেলা পর্যায়ের অনেক নেতাকে সন্দেহ হচ্ছে আমার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার। এখন অনেকের নাম আসছে আমার বাবার কিলারদের অর্থ জোগান দিয়েছে। অনতিবিলম্বে তাদের সামনে নিয়ে আসা হোক।
প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা অত্যন্ত দক্ষ। আমার বাবা হত্যাকে ভিন্ন খাতে নিতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু চাচার কয়েকজন কাছের অনুসারী পাঁয়তারা করছে। সেদিকে নজর দিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করুন।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এর পর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি।
বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচ দিন পর ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজীম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলে না তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। ২২ মে হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউ টাউন এলাকায় সঞ্জীবা গার্ডেনস নামের একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া যায় রক্তের ছাপ।
গত ২২ মে শেরেবাংলা নগর থানায় নিহত সংসদ সদস্যের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে অপহরণ মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় গ্রেফতারের পর গত ২৪ মে আসামি শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমানের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।পরে গত ৩১ মে দ্বিতীয় দফায় তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পরে তারা দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।
বর্তমানে তারা কারাগারে আটক রয়েছেন। এছাড়া এ মামলায় গ্রেফতার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু সাত দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় ঝিনাইদহের কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয়া হয়। তার রিমান্ড চলমান।
Leave a Reply