মোঃ মিন্টু শেখ ক্রাইম রিপোর্টার : ফরিদপুরে গভীর রাতে দরজার তালা ভেঙে অসহায় এক পরিবারের ঘরে ঢুকে গলায় ছুরি ধরে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে দুই বখাটে যুবকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ধর্ষণে অভিযুক্ত তুষার।
রোববার (০৯ জুন) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে ওই তরুণীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে।
জানা যায়, ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মেয়েটির বাবা সন্ধ্যায় একটি কারখানায় কাজ করতে যান। কাজে যাওয়ার আগে তিনি তার ছাপড়া ঘরে তিন মেয়েকে রেখে বাইরে থেকে তালা মেরে যান। গত ২৯ মে রাতে ডিউটিতে যান ওই বাবা, ঘরে রেখে যান মেয়েদের। গভীর রাতে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে একই এলাকার বখাটে যুবক ইমন শেখ ও তুষার দাস।
ঘরে ঢুকেই ওই তরুণীর গলায় ছুরি ধরে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। এসময় ওই তরুণীর আরেক বোন চিৎকার করলে তাকেও ছুরি দিয়ে ভয় দেখনো হয়। একপর্যায়ে তারা ঘর থেকে বের হয়ে গেলে ওই তরুণীর বোন প্রতিবেশীদের ডেকে ঘটনা খুলে বলেন। এদিকে ভুক্তভোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে প্রথমে মুখ না খুললেও শনিবার (৮ জুন) তুষার দাস ও ইমন শেখের নামে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন ওই তরুণীর বাবা। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে তুষার দাসকে গ্রেফতার করে। অভিযুক্ত তুষার দাস সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের হোগলাকান্দি গ্রামের বাবু রাম দাসের ছেলে। আর ইমন শেখ নবেন শেখের ছেলে।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী বলেন, ‘আমরা দুই বোন ঘুমিয়ে ছিলাম। গভীর রাতে দরজার কড়া নাড়ার শব্দ পাই, দরজা খুলতে বলে, আমরা দরজা খুলে না দেওয়ায় দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে দুই জন। ঘরে ঢুকেই আমার গলায় ছুরি ধরে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে। যাওয়ার সময় বলে যায় কাউকে বললে তোকে মেরে ফেলব। এসময় আমার ছোট বোন সঙ্গে ছিল, তার গলায়ও ছুরি ধরে রাখে। পরে তারা চলে গেলে আমার বোন প্রতিবেশীদের ডেকে আনে। তখন আমি অজ্ঞান ছিলাম।
প্রতিবেশী বিউটি বেগম বলেন, ‘গত তিন মাস আগে ওই তরুণীর মা অগ্নিকাণ্ডে মারা যান। একারণে বাড়িতে দেখার কেউ নেই, তাই ওর বাবা ঘরে তালা দিয়ে রেখে যান। এলাকার লোকজন তাকে সহযোগিতা করে একটি ছাপড়া ঘর তুলে দিয়েছেন। সেখানেই তারা বসবাস করে। বাবা ও তিন মেয়ে শারীরিকভাবে সবাই অসুস্থ।’
তিনি আরও বলেন, ওই তরুণী কথা কম বলে, মৃগী রোগও আছে। ঘটনার পর দুই তিন দিন জ্বর ছিল, কোনো কথাও বলেনি। পরে স্বাভাবিক হলে আমরা বিষয়টি জানতে পারি। ওই দিন যে ভয় পেয়েছে এখনও স্বাভাবিক হতে পারেনি। এঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
আরেক প্রতিবেশী রাবেয়া সুলতানা বলেন, ‘ওই রাতে ওই তরুণীর ছোট বোনের চিৎকারে আমরা এগিয়ে যাই। গিয়ে দেখতে পাই মেয়েটি অচেতন অবস্থায় হয়ে পড়ে রয়েছে। পরে আমরা তার মাথায় পানি দিয়ে হুশ ফেরাই। আমরা যাওয়ার আগেই তুষার ও ইমন পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘অসহায় পরিবার। ওদের আমরাই দেখে শুনে রাখি। কয়েক মাস আগে ওদের মা মারা গেছে। আমরা সকলে মিলে সকালে-দুপুরে-রাতে ওদের খাবার দেই। এরকম একটি পরিবারের সঙ্গে এমন ধরনের কাজ মেনে নেওয়া যায় না। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান জানান, তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এঘটনায় জড়িত তুষার নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
তিনি আরও জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে ওই তরুণীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে।তবে অভিযুক্ত তুষার দাসের মা শেফালী দাসের দাবি, ওই দিন বাড়িতে ছিল না তুষার। ঘটনা মিথ্যা। এঘটনার সঙ্গে তুষার জড়িত নয়।
Leave a Reply