হানিফ ঢালী গাজীপুর : রোববার রাত ১১ টা ১০ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস আন্ত:নগর নামক একটি ট্রেন টঙ্গীর মধুমিতা এলাকায় পৌছালে সিটি কর্পোরেশনের একটি ড্রাম ট্রাকের সাথে চলন্ত ট্রেনটির সংর্ঘষ হয়। ড্রাম ট্রাকটি উল্টে এক অটোচালকের হাত বিচ্ছিন্ন ও মাথা থেতলে যাওয়ার পর ঢাকায় নেয়ার পথে রাতেই তার মৃত্যু হয়েছে। ড্রাম চালক খোরশেদ পলাতক রয়েছে। প্রায় দেড়ঘন্টা ওই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পর চালু হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত আনুমানিক ১১ টা ১০ মিনিটে কুড়িগ্রামগামী কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস আন্ত:নগর ট্রেনটি টঙ্গীর মধুমিতাস্থ বেলতলা মসজিদের ওখানে পৌছালে সেখানে দাড়িয়ে থাকা সিটি কর্পোরেশনের একটি ড্রাম ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ড্রাম ট্রাকটি উল্টে অটোরিকশার উপরে পড়লে অটোটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে করে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাও থানার ধলা এলাকার বাসিন্দা এবং টঙ্গীর মধুমিতাস্থ রহমান কমিশনারে বাড়ির ভাড়াটিয়া দুদু মিয়ার তৃতীয় ছেলে দরিদ্র অটো চালক নবীন হোসেন [১৯] এর মাথা থেতলে যায় এবং ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে তাকে টঙ্গীস্থ শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার জেনারেল হাসপাতাল থেকে রাত সাড়ে ১২ টায় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এঘটনায় ট্রেনটির ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্থ হলে প্রায় দেড়ঘন্টা ওই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পর রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
এদিকে, নিহত দরিদ্র অটো চালক নবী হোসেনে মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে টাকার অভাবে আনতে পারছে না বলে তার মা ও বড় ভাই অটোচালক খালেক জানান। পরিবারের পক্ষ থেকে এঘটনার সুষ্ট বিচার দাবী করেন নিহতের মা, ভাই ও ছোট বোন।
স্থানীয় লোকজন আরো জানান, এই জায়গাটি রেলওয়ে লাইন সংলগ্ন ও সরকারী রেলওয়ের জায়গা। এখান দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার নারী পুরুষ চলাচলসহ শতাধিক ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচল করে। তারপর স্থানীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সামান্য কিছুর টাকার জন্য এই জায়গাটি স্থানীয় প্রভাবশালী কামাল হোসেনসহ কতিপয় ইঠা, বালু ও সুড়কী ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দেন। তারা রাস্তাটি দখল করে ইঠা, বালু ও সুড়কী রেখে ব্যবসা করার ফলে ট্রেন চলাচলের সময় স্থান সংকুলান না হওয়ায় এই জায়গাটিতে প্রায়ই ব্যাটারি চালিত যানবাহন কিংবা পথচারীরা ট্রেনের সাথে ধাক্কা খেয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় একাধিক মুরব্বীরা জানান, গত এক মাস আগেও এখানে একই ধরণের দূর্ঘটনা ঘটেছে, তাছাড়া প্রায়ই দূর্ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, রেলওয়ে নিরাপত্তা পুলিশ বা জিআরপি পুলিশ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেন না বরং তারা টাকা এবং স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন ইঠা বালি, সুড়কী ব্যবসায়ীর কাছে জিম্মি হয়ে আছেন বলেই মনে হয়। এখানে ইঠাগুলো না থাকলে ড্রাম ট্রাকটি সরিয়ে নিতে পারতো, তাহলে আর এ দূর্ঘটনাায় পড়ে দরিদ্র পরিবারে সন্তানটির হাত বিচ্ছিন্ন বা মৃত্যু হতো না। আমরা সকলেই এ ধরণের অপমৃত্যু বা পঙ্গুতের হাত থেকে মুক্তি চাই এবং রেললাইনের পাশে এসব ব্যবসা বন্ধের দাবী জানাই।
মঙ্গলবার বেলা ৩ টায় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী টঙ্গী ফাড়ির ইনচার্জ মো. নাসির উদ্দিনের অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি উপরোক্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং বলেন দূর্ঘটনার খবর পেয়েছি এ ব্যাপারে আইনী ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
একই সময় রেলওয়ে পুলিশ জিআরপি ফাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি ফাড়ির ইনচার্জ ছোটন শর্মাকে। ফাড়ির কনষ্টেবল জুলহাস মিয়ার নিকট ইনচার্জ ছোটন শর্মা কোথায় আছেন জানতে চাইলে তিনি কোন প্রকার তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে ছোটন শর্মার মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে দূর্ঘটনার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান, দূর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে এবং ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। ছেলেটি মারা গেছে জানতে পেরেছি, ড্রাম ট্রাক, অটোরিকশার সিজার লিষ্ট হয়েছে, এখনো কোন আইনী সিদ্ধান্ত হয়নি।
এব্যাপারে উর্দ্ধতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী [পূর্ত ও পথ] বিভাগের টঙ্গী অফিসে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। পওে আইডব্লিও বাংলাদেশ রেলওয়ে টঙ্গী জোনের দায়িত্বে থাকা আমির হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
Leave a Reply