মোঃ মোশারফ হোসেন সেলিম রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধি : সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রায় এক ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশীকে ডিঙ্গিয়ে রাঙ্গামাটি সংসদীয় আসনে নৌকার মাঝি হলেন চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, আওয়ামীলীগের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ দীপংকর তালুকদার। এ নিয়ে টানা ৬বার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন তিনি।
রবিবার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে ২৯৯নং পার্বত্য রাঙ্গামাটি সংসদীয় আসনের জন্য দীপংকর তালুকদারকে মনোনয়ন নিশ্চিত করা হয়। এসময় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে কুষ্টিয়া-২ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন বাদে বাকিসব আসনে নৌকার প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙ্গামাটি ২৯৯ একটি সংসদীয় আসনে নৌকা প্রতীক চেয়ে দীপংকর তালুকদারসহ ১০ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দলীয় মনোনয়ন পেলেন দীপংকর তালুকদার।
বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ দীপংকর তালুকদার এমপি বর্তমান রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্যর দায়িত্ব পালন করছেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনসহ বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা যখন সারাদেশে দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাপ চলছিল; সেসময় পাহাড়ের রাজনীতির মাঠেও নানা ধরনের গুজব উঠে। এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি নিখিল কুমার চাকমাসহ জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য এবং বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হাজী কামাল উদ্দীন, বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বরকল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সন্তোষ কুমার চাকমা, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য সমরেশ দেওয়ান, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য জয়সেন তঞ্চঙ্গ্যা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ জেলা কমিটির সভাপতি ও রাঙ্গামাটি পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অমর কুমার দে এবং রাঙ্গামাটির সাবেক সিভিল সার্জন অবসরপ্রাপ্ত ডা. স্নেহ কান্তি চাকমা ও মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন চৌধুরী ঢাকার কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয় থেকে রাঙ্গামাটির ২৯৯ আসনে আওয়ামীলীগের পক্ষে এমপি পদে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন। অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নৌকার মাঝি হতে দলীয় টিকিট পেলেন সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী ও রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার। এই ধারাবাহিকতায় আবারো প্রমাণিত হলো পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসনে দীপংকর তালুকদারের কোনো বিকল্প নেই।
আওয়ামীলীগের হয়ে রাঙ্গামাটি সংসদীয় আসনে থেকে টানা ছয়বার অংশ নিয়ে চারবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন দীপংকর তালুকদার। এর মধ্যে বিএনপি এবং অনিবন্ধিত আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) প্রার্থী একবার করে বিজয়ী হয়েছেন।
উল্লেখ্য, দীপংকর তালুকদার ১৯৫২ সালের ১২ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটিতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মাান) ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ছাত্র জীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাজনীতির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশকে বুকে ধারণ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ করে আসছেন। ৭৫’এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশে যে কজন নেতা এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিল, দীপংকর তার মধ্যে অন্যতম। ১৯৬৯ ও ১৯৮৭ এর গণঅভূত্থানে অংশগ্রহণ করে তিনি দু’বার কারাবরণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন। ছাত্র জীবনে তিনি ১৯৭২-৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাত্র সংসদের সদস্য এবং ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩-৭৪ সালে তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং ইংরেজি বিভাগীয় সমিতির প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৮৬ সালে তিনি রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আবার কারারুদ্ধ হন তিনি। ১৯৯৬ ও ২০০২ সালে তিনি পরপর দুইবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এখন পর্যন্ত তিনি দলের নেতাকর্মীদের সমর্থনে সভাপতি পদে বহাল রয়েছেন। তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে রাঙ্গামাটির ২৯৯ আসন থেকে সাংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১ সালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ১৯৯৬ সালের বাংলাদেশ শিক্ষা কমিটি, সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় সংসদ হাউস কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৯৮ সালে প্রতিমন্ত্রীর পদ মর্যাদায় পার্বত্য চট্টগ্রাম শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদনে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। ২০০৯ সালে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
Leave a Reply