নওগাঁর মহাদেবপুর ও বদলগাছীতে মাতৃত্বকালিন ভাতাভোগিদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না দিয়েই এজন্য বরাদ্দকরা টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে একটি বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে। তবে সংস্থাটি বলছে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে স্বল্প পরিসরে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
মহাদেবপুর ও বদলগাছী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দপ্তর সূত্র জানায়, মহাদেবপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রত্যেকটিতে ১৩৯ জন করে মোট ১ হাজার ৩৯০ জন ও বদলগাছী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রত্যেকটিতে ১৪১ জন করে মোট ১ হাজার ১২৮ জন মাতৃত্বকালিন ভাতাভোগি রয়েছেন। তাদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, নিরাপদ মাতৃত্ব ও গর্ভবতী মায়ের পরিচর্যা, শিক্ষা, আয়বর্ধক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে উৎসাহিতকরণ, জেন্ডার ও নারীর অধিকার, বাল্য বিবাহ, পরিবার পরিকল্পনা, যৌতুক, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, জন্ম নিবন্ধন, মাতৃদুগ্ধ পানের গুরুত্ব, মা ও শিশুর পরিচর্যা, খাদ্য ও পুষ্টি, দূর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দানের জন্য জয়পুরহাটের ‘মহিলা কর্মসংস্থান ও দারিদ্র বিমোচন সংস্থা’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্বকাল ভাতা প্রদান কর্মসূচির আওতায় ২০২১-‘২২ ও ২০২২-‘২৩ অর্থবছরে এসব প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য প্রতিবছর প্রতিজন ভাতাভোগির বিপরীতে ১৭৫ টাকা করে প্রশিক্ষণ বিল পাবে ওই এনজিও। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও এনজিওটির নির্বাহী পরিচালকের মধ্যে এসংক্রান্ত একটি চুক্তিনামা স্বাক্ষরিত হয় ২০২১ সালের ১০ আগস্ট।
চুক্তি অনুযায়ী ওই এনজিওটি তাদের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে উপজেলা ও জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার নিকট দাখিল করে সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণ পরিচালনা করবেন। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তারা তা তদারকি করবেন। কিন্তু তারা সময়মত সে পরিকল্পনা দাখিল করেননি।
চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি ইউনিয়নে ভাতাভোগিদের ৩০ জন করে গ্রুপ তৈরি করে প্রতিবছর জানুয়ারি-মে প্রান্তিকে ২ দিন ও জুলাই-নভেম্বর প্রান্তিকে ২ দিন করে প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। মহাদেবপুর উপজেলার খাজুর ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন জানান, গত জুন মাসের আগে ওই এনজিওর কোন কার্যক্রম এই ইউনিয়নে ছিলনা।
কোন কোন ইউনিয়নে ভাতাভোগিদের সমাবেশের আয়োজন করা হলেও তা ছিল মাত্র একদিন মাত্র দুঘন্টার জন্য। কিন্তু কোথাও কোন গ্রুপ তৈরি করা হয়নি। বরং একদিনেই সবাইকে ডাকা হয়। এতে ভাতাভোগিদের উপস্থিতিও কম ছিল।
মহাদেবপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ হাসান তরফদার শাকিল জানান, ওই এনজিও চুক্তিপত্রের শর্ত মোতাবেক মডিউল ও গাইড লাইন অনুযায়ী দলীয় ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ দেয়নি।
বদলগাছীর মিঠাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন জানান, সম্প্রতি এক দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। অর্ধেক ভাতাভোগি এতে অনুপস্থিত ছিলেন। প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য প্রতি উপজেলায় একজন করে কর্মী নিয়োগের বিধান থাকলেও একই কর্মী দুই উপজেলায় নিয়োগ দেয়া হয়। অভিযোগ করা হয় যে, ওই কর্মী মো: আলতুনিয়াস হোসেন সবুজ বদলগাছী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মরত প্রশিক্ষক নুর নবী বাচ্চুর ছেলে হওয়ায় দায়সারা গোছের প্রশিক্ষণ দিয়েও তারা পার পেয়ে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন জানান, গর্ভবতী মায়েদের প্রশিক্ষণ নিতে আসার জন্য কোন যাতায়াত ভাতা বা কোন নাস্তা দেয়া হয়না। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে দূর দূরান্ত থেকে গর্ভবতী, অসুস্থ ও শিশু সন্তান কোলে নারীদের প্রশিক্ষণে আসা খুব মুশকিল। তাই সবাই প্রশিক্ষণে আসতে না পারলেও বিষয়টি সহানুভূতির সাথে দেখা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট এনজিওকে ঠিকই সকলকে প্রশিক্ষণ দেয়ার বিল দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
মহাদেবপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানান, সম্প্রতি তিনি পোরশা উপজেলার অতিরিক্ত হিসেবে এই উপজেলার দায়িত্ব পেয়েছেন। গত জানুয়ারী-মে প্রান্তিকে মহাদেবপুর উপজেলায় কোন প্রশিক্ষণ হয়নি। ওই এনজিওকে এ ব্যাপারে তাগাদা দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি মহাদেবপুর থেকে বদলী হওয়া বর্তমানে সাপাহার উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আমিনা খাতুন জানান, তিনি একই সাথে মহাদেবপুর ও সাপাহার এই দুই উপজেলার দায়িত্বে ছিলেন। তাই প্রশিক্ষণগুলোর ব্যাপারে শতভাগ তদারকি করা যায়নি।
মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে মহিলা কর্মসংস্থান ও দারিদ্র বিমোচন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফারজানা আরফিন জানান, বদলগাছী উপজেলায় নতুন কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া গর্ভবতী মহিলাদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে বিষয়টিতে ছাড় দেয়া হয়েছে।
এই দুই উপজেলায় চুক্তিমত প্রশিক্ষণ না দিয়েও সংস্থাটি প্রশিক্ষণ দেয়া বাবদ মোটা অংকের টাকা অবৈধভাবে উত্তোলন করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সুধীমহল।
Leave a Reply