ডেস্ক রিপোর্ট : সরকার পতনের এক দফা দাবিতে নয়াপল্টনে জনসমাবেশ করেছে বিএনপি। এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া বিএনপির কর্মসূচি। চলমান কর্মসূচির শেষ দিনে দলটির নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ছিল ব্যাপক। অনেকেই আশাবাদী ছিলেন শেষ দিনের এই কর্মসূচি থেকে আসতে যাচ্ছে সরকার পতনের বড় কোনো ঘোষণা। কিন্তু নেতাকর্মীদের সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি দলটি।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে বুধবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে শুরু হয় বিএনপির সমাবেশ। এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ ধাপের কর্মসূচি। বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ৩৬টি রাজনৈতিক দল সমাবেশের ডাক দেয়।
সকাল থেকে ব্যানার-প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন নেতাকর্মীরা। নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত পুরো এলাকা নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। তারা সরকারের পদত্যাগের দাবির পাশাপাশি খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিয়েছেন। এই সমাবেশে ঢাকার বাইরের জেলাগুলো থেকেও নেতাকর্মীরা আসেন। যদিও অভিযোগ উঠেছে, ঢাকার ধামরাইয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বেশকিছু গাড়ি আটকে দিয়েছে পুলিশ।
যাত্রাবাড়ী থেকে আগত ছাত্রদল নেতা রফিকুল সময় সংবাদকে জানান, এই সরকারের কারণে বহুবার গ্রেফতার হয়েছেন তিনি। নিজ বাড়িতে থাকতে পারেন না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এই সরকারের পতন ঘটানো ছাড়া আর কোনো পথ নেই তাদের। তাই তাদের দাবি: কেন্দ্র যেন কঠোর থেকে কঠোরতম কর্মসূচি দেয়। বাঁচতে হয় বাঁচবেন না হয় মরবেন; তবুও এই সরকারের পতন ঘটিয়েই বাড়ি ফিরতে চান তারা। কঠোর কর্মসূচির প্রত্যাশা শুধু রফিকের ছিল না, সমাবেশে আসা অধিকাংশ নেতাকর্মীরই একই প্রত্যাশা ছিল–যেন দলটি কঠোরতম কোনো কর্মসূচির ঘোষণা দেবে।
রংপুর থেকে আসা বিএনপিকর্মী আনোয়ার সমাবেশে যোগ দিতে দুদিন আগে অর্থাৎ সোমবার (১৫ অক্টোবর) ঢাকায় আসেন। পায়ে কেডস, ব্যাগে শুকনো খাবার এবং প্রয়োজনীয় সব নিয়েই সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন তিনি। জানান, আজ তারা আশাবাদী সরকার পতনের জন্য কঠোর কোনো কর্মসূচির ঘোষণা আসতে যাচ্ছে।
তবে নেতাকর্মীদের এই প্রত্যাশা হতাশায় রূপ নেয় যখন প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য দিতে ওঠেন এবং পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘এই মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতনের মহাযাত্রার সূচনা হবে, এরপর আর থেমে থাকব না আমরা।’
তিনি বলেন, ‘এই অবৈধ সরকার নির্বিচারে গতকাল আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আমরা জেনেছি যে গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের ২৫০-এর বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। কারণ, সরকারের পায়ের নিচে আর মাটি নেই।’পূজার ছুটির মধ্যেই ক্ষমতা ছাড়তে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পদত্যাগ করে বিদায় নেবেন নাকি জনগণের মাধ্যমে বিতাড়িত হবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেন। এই সরকার সম্পূর্ণ অবৈধ। সংবিধানকে বেআইনিভাবে চুরি করে তাদের পক্ষে আনার চেষ্টা করেছে। পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বেআইনি। এটা করে তারা বাংলাদেশে একটা সহিংসতার রাজনীতি কায়েম করেছে।
তবে বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তেব্যের পর হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায় দলের নেতাকর্মীদের। অনেককেই দেখা যায় রাগ-ক্ষোভ নিয়ে সমাবেশস্থল ছাড়তে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি কর্মী সময় সংবাদকে বলেন, ‘এই সরকারের বিরুদ্ধে এই সভা-সমাবেশ দিয়ে আর কোনো লাভ নেই। এখন সময় এদের বিরুদ্ধে হরতাল-অবরোধের চেয়েও কঠোর কর্মসূচি দেয়া; কিন্তু কেন্দ্র যদি এখনও তা না দেয় তবে কীভাবে আমাদের দাবি আদায় হবে আমার জানা নেই।’
এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ওবায়দুল কাদের হলো আওয়ামী লীগের বিএনপিবিষয়ক মন্ত্রী। মিডিয়ায় তিনি বিএনপির সমাবেশের প্রচার করেছেন। তাই বিএনপির এই নেতা তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।আবদুস সালাম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যদি পুলিশ এসে আমাদের গুলি করে তাহলে আমরাও লড়াই করব। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ভবিষ্যতে যে কর্মসূচি আসবে সেই কর্মসূচি আমরা পালন করব। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই সরকারকে উৎখাত করে ছাড়ব।’
কোনো হুমকি এখন আর কাজে আসবে না উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের বলেছেন ১৮ তারিখ বসে যাব! আমরা কি বলেছি আমরা বসব? আমাদের বসাবসির কোনো কর্মসূচি নেই। আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি আসছে। শাপলা চত্বরের মতো অবস্থা করবেন বলেছেন, কিন্তু শাপলা চত্বরের ওরা, আর আমরা এক নই। আমরা তিন তিনবার ক্ষমতায় ছিলাম।’
Leave a Reply