নীতিমালা লঙ্ঘন করে ম্যানেজিং কমিটি গঠন, ঠিকাদারী ব্যবসা, স্কুলে অনিয়মিত, অনভিজ্ঞ বেকার যুবক এবং রাজমিস্ত্রীকে দিয়ে ক্লাস করানোসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে নওগাঁ সদর উপজেলার কাঁকনসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুরের বিরুদ্ধে। এবিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে বিদ্যালয়টির শিক্ষার পরিবেশ দ্রুত ফিরিয়ে আনার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল গফুর। নীতিমালা অনুযায়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত কোন শিক্ষকের ঠিকাদারী কাজে সম্পৃক্ত থাকার নিয়ম না থাকায় সুকৌশলে স্ত্রীর নামে করিয়েছেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সরকার নিবন্ধিত ঠিকাদারি লাইসেন্স। হয়েছেন বিএমডিএ’র প্রভাবশালী ঠিকাদার। শহরের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী তাকে শিক্ষক হিসেবে নয়, চেনেন ঠিকাদার গফুর হিসেবেই।
কাঁকনসী গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক মাসে দু-একবার বিদ্যালয়ে আসেন। এলাকার রাজমিস্ত্রী এবং বেকার ছেলেদের মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা বেতন দিয়ে তিনি তার পরিবর্তে ক্লাস করান। আমার মেয়ে প্রথম শ্রেণীতে পড়ছে। এখানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। তাই মেয়েকে এই স্কুলে পাঠিয়ে প্রতিনিয়ত শঙ্কায় থাকতে হয়।
একই গ্রামের আব্দুর রশিদ, ময়েন উদ্দিন, শাহীনুর রহমানসহ অনেকেই বলেন, প্রভাবশালী ঠিকাদার হওয়ায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আমরা কেউই প্রতিবাদ করতে পারিনা। নাটোর সমবায় অফিসের এক কর্মচারীকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বানিয়ে তিনি বিদ্যালয় সংস্কারে বরাদ্দকৃত টাকা প্রতিনিয়ত আত্মসাৎ করে আসছেন। অভিভাবক সদস্য, এলাকাবাসী কাউকেই তিনি কমিটি গঠনের বিষয়টি জানাননি। স্বপরিবারে নাটোরে থাকা সভাপতির ছেলেকে এই বিদ্যালয়ে ছাত্রত্ব দেখিয়েছে। গ্রামে তারা খুবই কম আসেন। অথচ তার ছেলেকে বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় উপস্থিত দেখানো হয়। বিদ্যালয়টির শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অবৈধ সভাপতিকে প্রত্যাহার এবং প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ক্ষতিয়ে দেখে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান তারা।
এবিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুর বলেন, আমার জানা মতে সরকারী অফিসে চাকুরী করলেও সভাপতি হওয়া যায়। নিয়ম মেনেই সঠিকভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আমার রুটিনে থাকা ক্লাসগুলো কখনোই অন্যজনকে দিয়ে করানো হয়নি। সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে নিজেই ক্লাসগুলো নিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সঠিক নয়।
শিক্ষকতার পাশাপশি ঠিকাদারী করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিএমডিএর ঠিকাদারী লাইসেন্স রয়েছে এটা সঠিক। তবে সেটা আমার স্ত্রীর নামে। আমি শুধু কাজগুলো মাঝেমধ্যে দেখভাল করি। নিজের নামে যেহেতু লাইসেন্স নেই, সেহেতু চাকুরীতে এই লাইসেন্সের কোন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন তিনি।
সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইতিয়ারা পারভীন বলেন, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তদন্তে যেটা সঠিক সেটাই তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি।
নওগাঁ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দীক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সভাপতিকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পাশাপাশি অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply