ঠাকুরগাঁওয়ে হত্যা মামলার একমাত্র আসামি মাফিজুল ইসলাম (৩২) নামে একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (২৭ জুলাই) দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা দায়রা জজ মামুনুর রশিদ এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি মো. মাফিজুল ইসলাম জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার বলিদ্বারা গ্রামের মৃত রিয়াজ আলীর ছেলে।
৮৩/২০১৫ নং মামলার একমাত্র আসামি মাফিজুল ইসলাম -এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে দণ্ডবিধি’র ৩০২ ধারায় আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্যানেল কোডের ৩০২ ধারায় বর্ণিত সর্বোচ্চ শাস্তি মুত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় এবং আসামিকে একই সাথে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা দণ্ডে দণ্ডিত করেন জেলা দায়রা জজ।
এছাড়াও সুপ্রীম কোর্টের হাইকোট বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে দণ্ডিত আসামি মাফিজুল ইসলামকে যতক্ষণ পর্যন্ত তার মৃত্যু না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু দণ্ডাদেশ কার্যকর করার জন্য নির্দেশ এবং জরিমানার অর্থ ভিকটিমের সন্তানদ্বয়কে প্রদান করার জন্য ও আসামি বরাবরে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করার নির্দেশ প্রদান করেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ২০১২ সালের (২ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমানিক ৭টা ৪৫ মিনিটে রাণীশংকৈল উপজেলার বলিদ্বারা গ্রামে মো: দুলাল হোসেনের বাড়ির ভিতর আঙ্গিনায় তার স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগমসহ (২১) তার দুই সন্তানকে লেখাপড়া করাচ্ছিলেন। এসময় হঠাৎ করে আসামি মাফিজুল ইসলাম বাড়িতে প্রবেশ করে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে জ্যোৎস্নাকে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। এতে জ্যোৎস্না বেগম চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটে পড়লে কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যান তিনি।
এসময় দুলালের ছেলে মেয়ে ও তার চাচা-চাচির চিৎকারে আসামি ঘটনাস্থল থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।
ঘটনার দুই বছর আগে মাফিজুল ইসলাম জ্যোৎস্না বেগমের সাথে জোর পূর্বক প্রেম ভালবাসার সম্পর্ক করার চেষ্টা করলে এলাকায় এই বিষয়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও গুণিজন ব্যক্তি দ্বারা শালিশ বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে মাফিজুল ইসলাম ১৫ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানাও প্রদান করেন। পরে আবার মাফিজুল ইসলাম দুলাল হোসেনের স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগমের সাথে গোপনে গোপনে পুনরায় প্রেম ভালবাসার চেষ্টা করলে তা প্রত্যাখান করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ও পরিকল্পিত ভাবে জ্যোৎস্নাকে মর্মান্তিকভাবে হত্যা করে।
এ ঘটনায় বাদি হয়ে রাণীশংকৈল থানায় দুলাল হোসেন মাফিজুল ইসলামকে একমাত্র আসামি করে একটি মামলা করেন (২ সেপ্টেম্বর) ২০১২ ইং তারিখে। পরে তৎকালীন রাণীশংকৈল থানার সাব ইন্সপেক্টর মো. রেজাউল আলম মামলাটি তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন (৩১ মে) ২০১৩ সালে আদালতে জমা দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখর কুমার রায় এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নারীর প্রতি যেকোন ধরনের সহিংসতা বন্ধে এটি একটি যুগান্তকারী রায়। আদালত ৮৩/২০১৫ নং মামলায় একমাত্র আসামি মাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে দণ্ডবিধি ৩০২ ধারায় আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীত ও সন্তোষজনকরুপে প্রমাণিত হওয়ায় প্যানাল কোডের ৩০২ ধারার বর্ণিত সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত এবং একই সাথে ১ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ প্রদান করেছেন।
Leave a Reply