ক্রাইম রিপোর্টার (সিরাজগঞ্জ) : সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় ফসলের মাঠ জুড়ে অপরূপ সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে। চারদিকে সরিষা ফুলের হলুদের সমারোহ। যেদিকে তাকাই মনে হয় যেন হলুদ চাদরে ঢেকে আছে ফসলের মাঠ। মৌচাষীরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে। এবার সরিষার ভালো চাষ হওয়ায় মধু আহোরণও ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৌচাষিরা। ফসলের জমির পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন মৌয়ালরা। ওই সব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার মৌ বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে সরিষার ফলন ১০ ভাগ বেড়ে যায়। তাই সরিষার ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সরিষা ক্ষেত থেকে বিনা খরচে মধু সংগ্রহ লাভজনক ব্যবসা। এতে মৌমাছি ব্যবসায়ী যেমন একদিকে মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে ক্ষেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও বাড়ছে।
জানা গেছে, চাষীরা সাধারণত পছন্দের একটি সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ছয় থেকে সাতটি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। আর তার ভেতর রাখা হয় একটি রাণী মৌমাছি। রাণী মৌমাছির কারণে ওই বাক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। আর এই চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করেন মৌমাছি চাষীরা।
প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মৌ-চাষিরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। মৌ চাষের মাধ্যমে চাষীরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। এসব সরিষা ফুলের মধু খাঁটি ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
সাতক্ষীরা থেকে আসা সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণের পদ্ধতি সম্পর্কে আব্দুল মজিদ নামের মৌচাষী জানান, মধু সংগ্রহের জন্য কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় এক প্রকার বিশেষ বাক্স। ওই বাক্সের ভেতরে মোম দিয়ে বানানো একটি সিড লাগানো হয়। তারপরেই বাক্সের মধ্যেই রাখা হয় রাণী মৌমাছি। রাণীর আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে পুরুষ মৌমাছিরা। সরিষার ক্ষেতের পাশে ১৩০ টি মৌ বাক্স বসিয়েছেন তারা। বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ-বাক্স বসানো হয়। এসব বাক্স থেকে ২ সপ্তাহে গড়ে প্রায় ৮ থেকে ১০ মণের মতো মধু পাওয়া যায়। এই মধু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা কিনে নিয়ে যান।
মৌচাষী আব্দুল মজিদ আরও বলেন, আমি সাতক্ষীরা থেকে মধু সংগ্রহ করতে এসেছি। আমি দশ বছর ধরে মধু সংগ্রহ করি। আমি ১৫ বছর ধরে মধু সংগ্রহ করি থাকি। আমার কাছে ১৩০ টি বাক্স রয়েছে যা থেকে ২ সপ্তাহে ৭-৮ মণ মধু হয়। প্রতি কেজি মধু ৪০০-৫০০ টাকা করে বিক্রি করছি।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, উপজেলায় মৌচাষিরা মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মৌমাছিরা ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে বনজ, ফলদ ও কৃষিজ ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। এক ফুলের পরাগরেণু অন্য ফুলের গর্ভমুন্ডে পড়লে পরাগায়ন ঘটে। যার ফলশ্রুতিতে ফসলের প্রায় ১০ থেকে ১৫ ভাগ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। তাই বলা যায়, মৌচাষিরা যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনি কৃষকেরাও ফসল উৎপাদনে লাভবান হচ্ছেন।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে সরিষা ফুল থেকে মধু উৎপাদনের প্রধান মৌসুম। উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১১ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে সরিষ বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। বাক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকেন মৌয়ালরা। সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু গুণে মানে অত্যন্ত ভালো।
তিনি আরও বলেন, সরিষা চাষিদের ও মৌ বাক্স স্থাপনকারীদের উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও আমরা নানাভাবে কৃষকদের পরামর্শ ও উৎসাহিত করছি যাতে সরিষা ক্ষেতে মৌ বাক্স স্থাপনের মাধ্যমে মৌচাষ করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়।
Leave a Reply