খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড়ে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ জন্ম ও মৃত্যু সনদ নিবন্ধন কার্যালয়ে থেকে প্রতিদিন ভুলে ভরা জন্ম ও মৃত্যু সনদ দেওয়া হচ্ছে,যার কারণে চরমভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ। এবং ভুল সংশোধনের জন্যে রামগড় পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম ও মৃত্যু সনদ নিবন্ধন কার্যালয়ে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
দেশের সকল মানুষকে জন্ম নিবন্ধনের আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকার ২০০১ সাল থেকে শুরু করেন নিবন্ধন কার্যক্রম, প্রথমে হাতে লেখার মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন সনদ ও মৃত্যু সনদ দেওয়া হতো,বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হচ্ছে,এক্ষেত্রে পাওয়া গেছে অনেক অসঙ্গতি,কারো কারো নামে রয়েছে একাধিক নিবন্ধন সনদ,আর এসকল সনদের জন্ম তারিখ, পিতা, মাতার নামে ভুল,জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্য ভুলের কারণে ভোগান্তিতে রামগড় পৌরসভা ও ২টি ইউনিয়নের শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন বয়সের অসংখ্য মানুষ।
সম্প্রতি দেখা গেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি শিক্ষার্থীর পরিচয় পত্র তৈরীর লক্ষ্যে শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন সনদ,পিতা,মাতার জন্ম সনদ,অনলাইন ভেড়িফাই কপিসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমা দিতে বলা হয়,কিন্তু জন্ম নিবন্ধন খোঁজতে গিয়ে অনলাইনে অনেকের এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না,যাদের পাওয়া যাচ্ছে অনেকের মূল জম্ম সনদের সঙ্গে অনলাইন জম্ম সনদের মিল নেই,এসব ভুলের কারণে ছাত্র ছাত্রীকে ইউনিক আইডির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে, এছাড়াও জন্ম ও মৃত্যু সনদে ভুলের কারণে বিভিন্ন পেশার মানুষ তাদের কাজ সঠিক সময়ে সমাদান করতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে রামগড়ের সর্বমহলে।।রামগড় পৌরসভা ও ইউনিয়নে অনেকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খুঁজ নিয়ে দেখা গেছে অনেকগুলো জন্ম সনদ তার ভিতরে দুই চারটি তথ্য সঠিক এবং বাকি গুলোর সব তথ্য ভুল, নিবন্ধন নম্বর,পিতা মাতার নাম,আবেদনকারীর নামেও ভুল রয়েছে, কোন রকম বাংলাতে ঠিক থাকলে,দেখা গেছে ইংরেজিতে ভুল, আর এই ভুল সংশোধন করতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন নিবন্ধন কার্যালয়গুলাতে হাজার হাজার মানুষ,একটু ভুলের কারণে পোয়াতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে আবেদন ফরমে সঠিকভাবে তথ্য দেওয়ার পরও ডিজিটাল জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে ভুল (সনদ) দেওয়া হচ্ছে,অনেকের প্রশ্ন এভুল কি ইচ্ছাকৃত ভাবে হচ্ছে,নাকি অনিচ্ছাকৃত?,এসব ভুল সংশোধনীর জন্য নিবন্ধন কার্যালয়ে গিয়েও কোন সমাদান পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা সামান্য ভুলের কারণে গ্রাম,থেকে শহরে যেতে হচ্ছে,আবার অনেকেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে,দিনের পর দিন আসা যাওয়ায়ও সমাদান মিলছেনা এসব বানান ভুলের সংশোধনী।
রামগড় পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ সুত্রে জানা গেছে,যখন জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে,তখন অনেক অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে এ জরিপ করানো হয়েছে।তাই অনেকের নামের শুদ্ধ বানান বা জন্ম তথ্য সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করতে পারেনি,এছাড়াও প্রতিটা বাড়িতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ না করে এক বাড়িতে বসে তথ্য সংগ্রহ করার কারণে এ ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন পূর্বে তথ্য সংগ্রহে ভুল হতে পারে সেটা ঠিক,বর্তমানে আবেদন ফরমে সব তথ্য সঠিকভাবে লিখে দেওয়ার পরও মাতার নাম,পিতার নামে ভুল,আবার দেখা গেছে আবেদনকারীর নামেও ভুল। রামগড় পৌরসভার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যাক্তি তার অভিযোগে জানান তার ছেলের জন্য রামগড় পৌরসভার জন্ম নিবন্ধন কার্যালয়ে জন্ম সনদ করতে আবেদন করেন,আবেদন ফরমে সঠিক তথ্য দেওয়ার পরও ছেলের নাম শিফাতুল ইসলাম যেখানে লিখবে সেখানে লিখা হয়েছে ,শিফতুল ইসলাম,সাথে সাথে সংশোধন করতে গেলে তাকে রামগড় পৌরসভার ডিজিটাল উদ্যোক্তা সেন্টার থেকে বলা হয় এই ভুল রামগড় পৌরসভায় সংশোধন করা সম্ভব নয়,এটা সংশোধন করতে হলে খাগড়াছড়ি যেতে হবে ও ৫শত টাকা খরচ হবে।অনেক ভুক্তভোগী জানান সংশোধনীর জন্য রামগড়ে অতিরিক্ত সংশোধন ফিসও নেওয়া হচ্ছে।রামগড় ১নং ইউপির বাসিন্দা মোঃ সাখাওয়াত হোসেন বলেন রামগড় ১নং ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধন কার্যালয়ে আমার মেয়ের নাম নাদিয়া সুলতানা (ইভা)একটি জন্ম সনদ বানাতে আবেদন করি,আবেদনে সব ধরনের তথ্য নির্ভুল দেওয়ার পরও জন্ম সনদে বানান ভুল করে রেখেছে , বাংলাতে নাদিয়া সুলতানা ইভা থাকলেও ইংরেজিতে ইভা দেওয়া হয়নি,আমি ভুল দেখে সংশোধনের জন্য নিবন্ধন কার্যালয়ে গেলে ঐখান থেকে আমাকে বলা হয়,সংশোধন করতে ৫০০টাকা লাগবে,তখন ওদের বলি আমি আবেদন ফরমে সব তথ্য নির্ভুল দেওয়ার পর আপনারা ভুল সনদ দিলেন কেন?আর আমি কি ভুল করছি,আমাকে কেন টাকা দিতে হবে। মাষ্টার পাড়ার আরেক বাসিন্দা জানান তার জন্ম নিবন্ধনে বাবার নাম ভুল,কালা মার্মা স্থানে ,মোঃ কালা মিয়া লিখা হয়েছে, এখন সংশোধন করা ছাড়া এসনদ কোন কাজে লাগাতে পারছি না তিনি জানান আমার মত অসংখ্য মানুষ এ সমস্যায় রয়েছে।।
এবিষয়ে রামগড় পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম (কামাল) জানান জন্ম ও মৃত্যু সনদে ভুল হলে মানুষের কষ্ট বেড়ে যায় এটা সত্য,তবে এ সমস্যা বেশি দিন আর থাকবে না,সরাসরি অনলাইনে নির্ভুল ও সঠিক তথ্যে আবেদন করলে সাথে সাথে জন্ম সনদ পাওয়া যাবে, খুব দ্রুতই এ সমস্যা সমাদানের জন্যে আমরা কাজ করছি,আর ভুল সংশোধনের বিষয়েও পুনরায় নতুন করে অনলাইনে আবেদন করলে সাথে সাথে জন্ম সনদ অনলাইন থেকে প্রিন্ট করে নেওয়া যাবে, জন্ম সনদ সংশোধনের জন্যে জেলাতে আর যেতে হবেনা।
রামগড় ১নং ইউনিয়ন পরিষদের সচিব বিজয় চাকমা জানান আমাদের পরিষদ থেকে নির্ভুল জন্ম ও মৃত্যু সনদ দেওয়ার চেষ্টা করছি,তবুও অনেক ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহে যদি ভুল থাকে তাহলে জন্ম সনদেও ভুল হয়, যারা ভুল সংশোধনের করতে আসছে তাদের সংশোধন করে দেওয়া হচ্ছে,বিষয়টি আমরা নজরে রেখেছি।যদি আবেদন ফরমে সঠিক তথ্য দেওয়া হয় তাহলে বর্তমানে অনলাইন নতুন যে সার্ভার করা হয়েছে সেখানে আর বানানে ভুল হওয়ার সম্ভবনা নেই।
Leave a Reply