গতকাল (২০ অক্টোবর) রাতে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির সাইজাম পাড়া ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি বাজার এলাকায় র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার নেতৃত্বে র্যাব-৭ ও র্যাব-১৫ অভিযান পরিচালনা করে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৭ জন এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ৩ জনসহ ১০জনকে গ্রেফতার করে।এ সময় তদের কাছ থেকে বিপুল পরিমানে অস্ত্র,গোলাবারুদ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, সৈয়দ মারুফ আহমদ মানিক(৩১), পিতা: মৃত সৈয়দ আবুল কালাম, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।ইমরান হোসাইন সাওন(৩১), পিতা: মো. শাহ আলম,থানা স্বরুপকাঠি, পিরোজপুর। কাওসার শিশির (৪৬), পিতা: মৃত গোলাম কিবরিয়া, শৈলকুপা, ঝিনাইদহ। জাহাঙ্গীর আহম্মেদ জনু(২৭), পিতা: ফজলুল হক,বিয়ানিবাজার, সিলেট।মো. ইব্রাহিম আলী (১৯), পিতা: নয়ন মৃধা নুরুজ্জামান,মুলাদি, ররিশাল।আবু বক্কর সিদ্দিক বাপ্পি(২৩), পিতা আতিকুল আলম, গোলাপগঞ্জ, সিলেট।রুফুমিয়া (২৬), পিতা: আব্দুস সালাম, চাতক, সুনামগঞ্জ। জৌথান বম(১৯), পিতা: লাল মুন সয় বম,রোয়াংছড়ি, বান্দরবান। স্টিফেন বম(১৯),পিতা: লাল মিন সম বম,রোয়াংছড়ি, বান্দরবান।মাল সম বম(২০),পিতা: জিক বিল বম, রোয়াংছড়ি, বান্দরবান।
উদ্ধারকৃত অস্ত্র SBBL বন্দুক ৯টি, SBBL বন্দুকের গুলি ৫০ রাউন্ড, কার্তুজ কেইস(SBBL) ৬২ টি, IED (হাত বোম্ব) ৬টি,কার্তুজ কেইস (SA) ১ টি,কার্তুজ বেল্ট ২ টি, দেশীয় পিস্তল ১টি,বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র,ওয়াকিটকি ১টি, ওয়াকিটকি চার্জার ৩ টি,লিফলেট,জিহাদি বই, পোষাক, PROPOSED MAP OF KUKI-CHIN STATE লিখা মানচিত্র ১০ টিসহ বিভিন্ন সরঞ্জমাদি।
শুক্রবার (২১অক্টোবর) বেলা ১২টায় বান্দরবান জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের লিগ্যল এন্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লা হতে বেশ কয়েকজন তরুণ উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়। এলিট ফোর্স র্যাব উক্ত বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।গত ৬ অক্টোবর ২০২২ তারিখে জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত থাকা ৭ জনকে মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ এলাকা থেকে র্যাব গ্রেফতার করে।পরবর্তীতে যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ থেকে আরো ৫ জনকে গ্রেফতার করে।
বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তারকৃত এই উগ্রবাদীরা তাদের সংগঠন সম্পর্কে র্যাবকে চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।ইতিপূর্বে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, হরকাতুল জিহাদ,জেএমবি এবং আনসার আল ইসলামের বেশ কিছু সদস্য ২০১৭ সালে নতুন একটি উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে "জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া" (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) নামে নামকরণ করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। হুজিবি, জেএমবি ও আনসার আর ইসলাম নিষিদ্ধ হওয়ায় নিষিদ্ধ সংগঠন থেকে সদস্য সংগ্রহ ও অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা দুরূহ হয়ে পড়েছিল বিধায় তারা সংগঠন হতে বের হয়ে নতুন এই উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে।
তাদের প্রধান টার্গেট থাকতো দেশের কোমলমতি তরুণদের উপর। তরুণদেরকে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ ভিডিও এবং ধর্মীয় অপব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করা হতো।
সম্প্রতি উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় হিজরতের নামে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া ১৯ জেলার ৫৫ তরুণের তালিকা প্রকাশ করেছে র্যাব। তাদের মধ্যে ৩৮ জনের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা প্রকাশ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্যমতে র্যাব আরো জানতে পারে যে, নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনেকেই বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ছত্রছায়ায় দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে আত্মগোপনে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ, বিভিন্ন নাশকতা ও সশস্ত্র হামলার পরিকল্পনা সহ সংগঠনটির বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।এরই ধারাবাহিকতায় গত দুই সপ্তাহ যাবত র্যাব অনেক বড় ধরনের অভিযান শুরু করে।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় পার্বত্য অঞ্চলের প্রশিক্ষণ শিবিরে মোট প্রশিক্ষণার্থী ৫০ এর অধিক। 'জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া' সংগঠনটির আমির মোঃ আনিসুর রহমান (মাহমুদ) নামক ব্যক্তি যার নেতৃত্বে উগ্রবাদী সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে।এছাড়াও উগ্রবাদী এই সংগঠনে ৬ জন শূরা সদস্য রয়েছে যারা দাওয়াতি, সামরিক, অর্থ, মিডিয়া ও উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছে। শূরা সদস্য আব্দুল্লাহ মাইমুন দাওয়াতি শাখার প্রধান, মাসকুর রহমান সামরিক শাখার প্রধান, মারুফ আহমেদ সামরিক শাখার দ্বিতীয় ব্যক্তি, মোশারফ হোসেন অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান, শামীম মাহফুজ প্রধান উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক এবং ভোলার শায়েখ আলেম বিভাগের প্রধান হিসেবে সংগঠনটিতে দায়িত্ব পালন করছে। তারা অস্ত্র চালনা সহ সশস্ত্র সংগ্রামের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গোপনে পরিচালনার জন্য বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির দুর্গম এলাকা কে বেছে নেয়।এজন্য তারা স্থানীয় একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সহায়তা গ্রহণ করে।তারা পার্বত্য অঞ্চলের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হতে তাদের খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করত।
পার্বত্য অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের গ্রেপ্তারকৃত তিনজন সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা কেএনএফ (কুকি-চীন ন্যিশনাল ফ্রন্ট) এর সামরিক শাখা কেএনএ এর সদস্য।যারা "জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া" (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদানের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। আরও জানা যায় যে, 'কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট' (KNF) নামক সশস্ত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নাথাং বোম এর সাথে ২০২১ সালে "জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া" এর আমির এর সাথে সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং পার্বত্য অঞ্চলের কেএনএফ এর ছত্রছায়ায় জামাতুল আনসার এর সদস্যদের আগামী ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে তিন লক্ষ টাকা এবং কেএনএফ এর সকল সদস্যদের খাবার খরচ বহন করা হতো।
উল্লেখ্য, গত ৯অক্টোবর মধ্য রাত থেকে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির সার্বিক সহযোগিতায় রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবান সীমান্তের বিভিন্ন অঞ্চলে র্যাব এই অভিযান শুরু করে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ গোলাম কিবরিয়া / ই-মেইল :daliysomoyaralo24info@gamil.com --(জাতীয় দৈনিক সময়ের আলো প্রিন্ট পত্রিকার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই)
দৈনিক সময়ের আলো ২৪ডট কম