পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক ধারাগুলো সংশোধন করে চুক্তির পূনমূল্যায়ন করার দাবিতে এবং ‘গত ৯ নভেম্বর খাগড়াছড়িতে অপহরণকৃত কাঠ ব্যবসায়ী রাসেল’কে উদ্ধার’, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, প্রত্যাহারকৃত সেনাক্যম্প পুনঃস্থাপন, পাহাড়ে পুলিশ বাহিনীকে আধুনিকায়নের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) রাঙামাটি জেলা কমিটি। মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ বলেন, চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য ২৬টি জাতীয় আইন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট ১২টি আইনসহ মোট ৩৮টি আইন সংশোধন করা প্রয়োজন।
সরকার চাইলে আমরা পার্বত্য এলাকায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় সকল সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা সরকারকে দিতে প্রস্তুত রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ পিসিসিপি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) সকালে রাঙামাটি শহরের বনরূপা সিএনজি স্টেশন চত্বরের সামনে পিসিসিপি’র রাঙামাটি জেলা কমিটির আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধন ও সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের পূর্বেই বলা হয়েছে, শান্তিচুক্তি হচ্ছে পাহাড়ে শান্তি স্থাপনের একটি আকাঙ্খা। কিন্তু সেই চুক্তিতেই এমন কিছু ধারা সংযোজিত হয়েছে যা বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধান ও প্রচলিত বহু আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। একই সাথে তা বৈষম্যমূলক ও সাম্প্রদায়িক। ইতোমধ্যে শান্তিচুক্তির বিভিন্ন ধারা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছে। এই রিটের রায়ে উচ্চ আদালত শান্তিচুক্তির অনেকগুলো ধারা অসাংবিধানিক বলে বাতিল করে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে পার্বত্যবাসীর সাথে আলোচনা করার দাবি জানান পিসিসিপি’র নেতৃবৃন্দরা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি’র) রাঙামাটি জেলা সভাপতি ও নব নির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. হাবীব আজমের সভাপতিত্বে এ মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ পিসিএনপি’র রাঙামাটি জেলা সহ-সভাপতি কাজী মো. জালোয়া, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোলায়মান সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিকী, পিসিসিপি’র রাঙামাটি জেলা সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম, কলেজ আহ্বায়ক মো: শহিদুল ইসলাম, পৌর সভাপতি পারভেজ মোশারফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম রনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মো: রিয়াজুল ইসলাম বাবু, সাপছড়ি ইউনিয়ন সভাপতি মো: ইদ্রিছ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, গত ৯ নভেম্বর থেকে খাগড়াছড়িতে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক অপহরণকৃত কাঠ ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম রাসেল’কে উদ্ধার করতে পারছেনা কেন প্রশাসন? এর দ্বারা প্রমাণিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতীয় আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন গুলোর হাতে সকলেই জিম্মি, এখানে কেউ স্বাধীন ভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারছেনা, স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে পারছেনা, তাই পাহাড়ে শান্তি ও সম্প্রীতি আনায়নে সন্ত্রাস দমনে অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে, প্রত্যাহারকৃত সেনাক্যম্প পুনঃস্থাপন করতে হবে ও পাহাড়ে পুলিশ বাহিনীকে আধুনিকায়ন করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গুলোকে চিরতরে নির্মূল করতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে রাঙামাটি শহরের অদূরেই উপজাতি সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক কাঠের গাড়ীতে বারবার গুলি করা, শহরের রির্জাভ বাজার এলাকায় ব্যবসায়িদের কাছে চাঁদার জন্য চিঠি দেওয়া, কৃষি ডিপ্লোমা এলাকায় মালবাহী ট্রাক আটকিয়ে পণ্য লুট করা ও ড্রাইভার হেলপারকে আটকিয়ে রাখা এবং আসামবস্তি এলাকায় সশস্ত্র অবস্থায় মিটিং করার মাধ্যমে শান্তিচুক্তির শর্ত লংঘন করেছে সন্তু লারমা সহ উপজাতীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী গুলো।
বক্তারা আরো বলেন, শান্তি রক্ষার্থে জেএসএস-এর সাথে যে ৪ খন্ডে ৭২ টি ধারার পার্বত্য চুক্তি হয়েছে তার অনেক গুলো ধারাই বাংলাদেশ সংবিধানের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক চুক্তির ধারাগুলোর মাধ্যমেও পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। বরং ১৬ কোটি মানুষকে অগ্নিশর্মা করে তুলেছে! দেশের সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পার্বত্য শান্তিচুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ণ করলে নিঃসন্দেহে দেশের স্বাধীনতা এবং স্বার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। যা বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের উত্তরসূরিরা এবং বাংলার অপ্রতিরোধ্য জনতা কখনো মেনে নিবেনা।
দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের স্বঘোষিত কিছু কতিপয়শ্রেণীর ভাড়াটিয়া বুদ্ধিজীবী আছেন যারা সন্তু লারমার উৎকোচ গ্রহণ করে তার সাথে সুর মিলিয়ে শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ণ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে থাকেন। অথচ এই কতিপয়শ্রেণী কখনোই এই কথাটি বলেননা যে পার্বত্য চুক্তির পরেও পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রধারী বিদ্যমান কেন? কথিত এই বুদ্ধিজীবিরা নিজেদেরকে দেশপ্রেমিক দাবি করলেও দেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক শান্তিচুক্তির এই ধারা সমূহ তাদের চোখে পড়েনা!
Leave a Reply