নওগাঁর মান্দায় আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ‘সীড প্রোগ্রাম অফ গ্রামীণ সোসাইটি’ নামে একটি বেসরকারী সংস্থার অবৈধভাবে কমিটি গঠনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিয়ে নতুন কমিটির কর্তারা ওই সংস্থার জমা করা অন্তত কোটি টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা করছেন। অবিলম্বে অবৈধভাবে গঠিত কমিটি বাতিলের দাবী জানিয়েছেন বঞ্চিত সদস্যরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে ২০০০ সালের ১১ নভেম্বর ‘সীড প্রোগ্রাম অফ গ্রামীণ সোসাইটি’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা যাত্রা শুরু করে। সেসময় সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন মোস্তফা কামাল। সংস্থার ২৫ জন সাধারণ সদস্যের ভোটে ১১ সদস্যের পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। বৃক্ষ রোপণ, প্রতিবন্ধী সেবাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে সংস্থাটি।
সূত্রটি আরও জানায়, তিন বছর পরপর সাধারণ সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে নতুন পরিচালনা কমিটি গঠন করে সংস্থার কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি কর্তৃক প্রাথমিক অনুমোদনের পর ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম চালু করা হয়। সংস্থার সর্বশেষ কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি।
এ অবস্থায় নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলে আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম সংস্থার গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কর্মকা- শুরু করেন। এ সময় পরিচালনা পর্যদের অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে আরও ১০ জন সাধারণ সদস্য অন্তর্ভূক্ত করেন তিনি। যার মধ্যে অবৈধ কমিটির সভাপতি শহিদুল করিম শিবলী অন্যতম।
সংস্থার তৎকালিন পরিচালক মোস্তফা কামাল বলেন, নতুন কমিটি গঠনের সময় সংস্থার পুরাতন সদস্যদের অবহিত করা হয়নি। গোপনে নতুন সদস্য শহিদুল করিম শিবলীকে সভাপতি, আবদুল হালিমকে সহসভাপতি ও খাইরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭ সদস্যের কমিটি অনুমোদনের জন্য উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরে দাখিল করেন খাইরুল ইসলাম। যা ছিল সংস্থার গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। বিষয়টি জানতে পেরে অবৈধভাবে গঠিত এ কমিটি বাতিলের জন্য নওগাঁর ২য় সহকারী জজ আদালতে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মামলা করা হয়। মামলাটি বর্তমানে চলমান আছে।
মোস্তফা কামাল অভিযোগ করে বলেন, আদালতের ইনফরমেশন স্লিপ উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরের তৎকালিন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের কাছে দাখিল করা হলেও তিনি তা আমলে নেননি। আদালতকে উপেক্ষা করে তিনি অবৈধ কমিটির অনুমোদন দেন। অনুমোদনের পর অবৈধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম সংস্থার জমাকৃত অন্তত কোটি টাকা আত্মসাতের পাঁয়াতারা করছেন। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষে অবৈধভাবে গঠিত কমিটি বাতিলসহ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তিনি।
সংস্থার সাবেক পরিচালক জালাল হোসেন বলেন, মান্দা উপজেলা সদর প্রসাদপুর বাজারের বিজয়পুর এলাকায় সংস্থার প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। কিন্তু নতুন কমিটির কেউই এখানে অবস্থান করেন না। সামাজিক উন্নয়ন মুলক কর্মকা-ও নেই। কয়েকজন কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে শুধুমাত্র ঋণের টাকা উত্তোলন করছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম বলেন, সংস্থার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সকল বিধি মেনে নতুন কমিটি গঠন করে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।
নতুন এ কমিটির মাধ্যমে সংস্থার যাবতীয় কার্যক্রম সঠিকভাবে চলছে। এখানে টাকা আত্মসাতের কোনো বিষয় নেই।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমার ভালো জানা নেই। তবে সংস্থাটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে জটিলতা চলছে এমনটি আমি শুনেছি।
Leave a Reply