মোঃ আল-আমীন (সিরাজগঞ্জ) : খাদ্যশস্য ভান্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ চলনবিল মাঠ থেকে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ায় ক্ষেতের বোনা আমন ধান কাটা শেষে জমি পরিষ্কার করে কাদামাটিতে সাদা সোনা খ্যাত মসলা জাতীয় ফসল রসুন লাগাতে শুরু করেছে এ অঞ্চলের কৃষকরা।
দিন মজুরদের পাশাপাশি কৃষক পরিবারের সদস্যরাও এই রসুন লাগানোর কাজে সক্রিয় অংশীদার, কারণ ক্ষেতের মাটি শুকিয়ে গেলে চাষের উপযোগীতা হারাবে ক্ষেত, যে কারণে সজাগ থাকতে হয় এবং বাড়তি যত্ন নিতে হয়। চলন বিলের মাটিতে চাষে এবং বিনা চাষে রসুন রোপণ করা যায়, রোপনকৃত রসুন এক সপ্তাহের মধ্যেই চারা বের হয়।
এদিকে কৃষকরা বলছেন, গত মৌসুমে রসুনের ভালো ফলন এবং ভালো দাম পাওয়ায় এ মৌসুমে বীজ ও উপকরনের দাম বিগত বছর গুলোর তুলনায় বেড়েছে কয়েকগুন। ফলে চলতি মৌসুমে রসুন চাষে প্রতি বিঘায় ২৮ থেকে ৩২ হাজার টাকা ব্যয় হবে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে তাড়াশ উপজেলায় রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৭৫ হেক্টর জমি, এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৩০৫ হেক্টর। এছাড়া বিনাচাষে ২৭০ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ হয়েছে।
তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, রসুন চাষ ঘিরে কর্মমুখর হয়ে উঠেছে কৃষক পরিবারগুলো। গারস্থ্য/কৃষকের নিয়োগ করা পুরুষ ও মহিলারা বীজ রসুন থেকে কোয়া ছাড়ানো বা রসুন ভাঙ্গার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বাদ যাচ্ছে না বাড়ির কিশোর-কিশোরীরাও। অধিকাংশ কৃষক গ্রামের মহিলাদের রসুন ভাঙ্গার কাজে নিয়োগ করেছেন, প্রতিমণ রসুন ভাঙার মজুরি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দিতে হচ্ছে।
একমণ রসুন ভাঙ্গতে সময় লাগে দুই দিন পাশাপাশি চলছে জমি প্রস্তুতসহ রসুন রোপনের কর্মযজ্ঞ। নাদোসৈয়দপুর গ্রামের কৃষক রান্টু ও মিঠু আহমেদ জানান, রসুনের বীজ, সার-কীটনাশক, সেচ, নিড়ানী, শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধির কারনে গত বছরের তুলনায় এবছরে রসুন চাষে প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। মাগুরা বিনোদ ইউনিয়নের চরহামকুড়িয়া গ্রামের কৃষক ফরিদুল ইসলাম জানান, এবছর ৫ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করেছেন তিনি, এখন পর্যন্ত বিঘা প্রতি বীজ, সার-কীটনাশক ও সেচ বাবদ খরচ হয়েছে ৩০হাজার টাকা, এরপরে রসুন রোপণ ও নিড়ানীসহ শ্রমিক খরচ হবে ৯ হাজার টাকা, এতে তার বিঘা প্রতি মোট ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হবে।
জানা যায়, চলনবিল অঞ্চলে বিগত দুই দশক ধরে বিনাচাষে রসুনের আবাদ করে কৃষকেরা অধিক লাভবান হওয়ায় চলনবিলের তাড়াশ, গুরুদাসপুর, সিংড়া, বড়াইগ্রাম, চাটমোহরসহ আরো অনেক উপজেলায় বর্তমানে এই পদ্ধতিতে রসুন চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
চাষ পদ্ধতি, আমন কাটার এক দুই দিনের মধ্যে ধানের খড় (লারা) তুলে জমি প্রস্তুত করতে হয়। এরপর প্রয়োজনীয় সার-কীটনাশক দিয়ে কাঁদার ওপরে রসুনের একটি করে কোয়া রোপন করতে হয়। রোপনকৃত রসুনের ক্ষেত ধানের খড় বা কচুরী পানা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়, ঢেকে দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যই রসুনের চারা গজায়।
Leave a Reply