মো:লিটন উজ্জামান (কুষ্টিয়া) : কুষ্টিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বৈদ্যুতিক মিটারের দামী সার্ভিস তার চুরি করে আসছে একটি চোর সিন্ডিকেট। পুলিশ এই আন্ত জেলা তার চুরি সিন্ডিকেটের ৭ সদস্য গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছ থেকে চুরিকৃত বৈদ্যুতিক তার ও চুরির সরঞ্জাম ও একটি মটরসাইকেল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বুধবার (৫ এপ্রিল) বেলা ১২টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার খায়রুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) জেলার সদর থানাধীন পলানবক্স লেন থানাপাড়ার জয়নাল আবেদীনের ছেলে মোঃ রুহুল আমীন থানায় হাজির হয়ে অজ্ঞাতনামা চোর/চোরদের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগের দেয়।
থানায় বাদীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে কুষ্টিয়া মডেল থানার মামলা নং-১০/১৮৬,তারিখ- ০৪/০৪/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা-৩৭৯ পেনাল কোড রুজু করা হয়।
লিখিত অভিযোগে জানায় যে, কুষ্টিয়া মডেল থানাধীন পলানবক্স লেন থানাপাড়া মসজিদ সংলগ্ন বাদীর খালা মোছাঃ ফারিজা খাতুন (৫৫) এর মালিকানাধীন সাততলা বিশিষ্ট ভবন আছে। যাহার হোল্ডিং নং-১০৫। বাদীর খালা বিদেশে থাকায় উক্ত ভবনের যাবতীয় পরিচালনা বাদী করে থাকে এবং ভবনের পাঁচতলার একটি ফ্লাটে বাদী স্ব-পরিবারে বসবাস করেন। উক্ত বিল্ডিংয়ের ৩য় তলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব কেরামত আলী স্বপরিবারে বসবাস করেন। সোমবার (৪ এপ্রিল) তারিখ রাত্র অনুমান ২টার দিকে ওই ভবনের পাঁচতলায় রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে রাত্র অনুমান ০২.৩০ ঘটিকার সময় হঠাৎ বিল্ডিংয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে গেলেবাদীর ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং দেখতে পায় যে আশপাশের সকল বিল্ডিংয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে কিন্তুতার বিল্ডিংয়ে বিদ্যুৎ নাই। তখন বাদীর সন্দেহ হলে ভবনের নিচতলায় বৈদ্যুতিক মিটারের কাছে গিয়ে দেখতে পায় বৈদ্যুতিক পোল হতে বৈদ্যুতিক মিটারে আসা ০৫টি তামার তার, যাহার প্রত্যেকটির দৈর্ঘ্য অনুমান-২০ গজ করে সর্বমোট অনুমান-১০০ গজ, যাহার মূল্য অনুমান-৩০,০০০/-টাকাচুরি হয়ে গেছে। থানায় বাদীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে কুষ্টিয়া মডেল থানার মামলা নং-১০/১৮৬,তারিখ- ০৪/০৪/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা-৩৭৯ পেনাল কোড রুজু করা হয়। কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ পৌর এলাকার থানা পাড়াস্থ ছয় রাস্তার মোড় হতে ঘটনাস্থলের সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করে আসামী সনাক্তকরে প্রথমে আসামী সুজনকে থানাপাড়াস্থ তার বসতবাড়ী হতে ইং ০৪/০৪/২০২৩ তারিখ ২১:০৫ ঘটিকার সময় গ্রেফতার করা হয় এবং ঐ সময় আসামী ইমন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তার চুরির কাজেব্যবহৃত মোটর সাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়। ধৃত আসামী সুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় ৪ এপ্রিল তারিখ রাত্রে সে এবং আসামী ইমন মিলে তার চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে এবং ইতিপূর্বেও তারা কুষ্টিয়াশহরে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে তার চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। তারপর আসামী সুজনকে সাথে নিয়ে যে ব্যক্তির নিকট চোরাই তার বিক্রি করে মোঃ মিনহাজ (৪৮), পিতা- মৃত রওশন আলী শেখ,সাং- পশ্চিম বানিয়াপাড়া, থানা- কুমারখালী, জেলা- কুষ্টিয়া’র নিকট বড় বাজারস্থ রক্সিগলি সংলগ্ন ক্রোকারিজ এর দোকানে যেয়ে দোকান বন্ধ দেখা যায়। দোকানে দেয়ালে লেখা মোবাইল নাম্বার-০১৭১২-৫৬৫৮০৩ তে আসামী সুজনকে দিয়ে সুকৌশলে আসামী মোঃ মিনহাজ’কে মোবাইল করেচোরাই মালামাল বিক্রির কথা ডাকা হলে সে ফোন বন্ধ করে রাখে। তাৎক্ষনিক ধৃত আসামী সুজনকে নিয়ে চোরাই তার ক্রেতা আসামী মোঃ মিনহাজ এর বাড়ী কুমারখালী থানাধীন পশ্চিম বানিয়া পাড়াস্থ তার বসতবাড়ীর পশ্চিম পার্শ্বে সেমি পাকা চার চালা ঘরের মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করা হয় এবং চোরাই মালামাল উদ্ধার পূর্বক ৪ এপ্রিল তারিখ রাত্র অনুমান সাড়ে দশটার দিকে জব্দ করা হয় এবং আসামী ১। মোঃ ইমন (২৭), পিতা- আব্দুর রশিদ, সাং-মকছেদ সাই সড়ক,ওয়ার্ড নং- ১২, হরিশংকরপুর, থানা ও জেলা-কুষ্টিয়া পলাতক রহিয়াছে। থানা পুলিশ আসামীদের নিকট হতে১। বৈদ্যুতিক মিটারে আসা ০৫টি তামার তার, যাহার প্রত্যেকটির দৈর্ঘ্য অনুমান ২০ গজ করে সর্বমোট অনুমান ১০০ গজ, যাহার মূল্য অনুমান ৩০,০০০/- টাকা, ২। ০১ টি লাল রংয়ের হিরো ১০০ সিসি মোটরসাইকেল, যাহার রেজিঃ নং কুষ্টিয়া-হ-১৫-৩৮২৫, ৩। ০১টি তার কাটা প্লাস,৪। ০১টি ছ্যানদা। এছাড়াও উল্লেখিত আসামীর মোঃ মিনহাজ এর নিকট হতে ০৬ টি সাদা প্লাস্টিকেরমধ্যে হতে চোরাই তার উদ্ধার করে।
তার চুরির অপর ঘটনা সোমবার (৪ এপ্রিল) রাত্র অনুমান দেড়টার দিকে কুষ্টিয়া মডেল থানাধীন ট্যুরিস্ট পুলিশ অফিস সংলগ্ন পূর্ব মজমপুর হোল্ডিংনং-১৭/১ তিনতলা বাড়ীর নিচতলা হতে উল্লেখিত আসামীরাসহ অন্যান্যা আসামীরা তার চুরির ঘটনাঘটায়। এ সংক্রান্তে কুষ্টিয়া মডেল থানার মামলা নং- ১৩/১৮৯, তারিখ-০৫/০৪/২০২৩ খ্রিঃ,ধারা- ৩৭৯ পেনাল কোড রুজু হওয়ায় কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ বৈদ্যুতিক তার চুরির ঘটনায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ০৭ (সাত) জন আসামীকে গ্রেফতার করে।
এ সময় পুলিশ সুপার আরও বলেন, চোরদলকে ধরার জন্য পুলিশ লেগে ছিলো। অবশেষে গেল রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ওই ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- বাড়াদী উত্তরপাড়া গ্রামের আরিফুল ইসলামের ছেলে হাফিজুর রহমান দিপু, হরিপুর বোয়ালদহ গ্রামের মৃত আনোয়ারের ছেলে শাহিন, থানাপাড়া পুরাতন বাঁধ এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে মিনারুল, নতুন বাঁধ এলাকার মৃত বছির সরদারের ছেলে কালাম সরদার (৫০), ইবি থানাধীন মনোহরদিয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের তাহাজ উদ্দিনের ছেলে তুহিন, আমলাপাড়ার সাইদুরের ছেলে সোহাগ, মিলপাড়া পুলিশ ফাঁড়ী এলাকার মৃত মান্নানের ছেলে হাসান। কালাম সরদার ছাড়া বাকী ৫ জনই যুবক। আটককৃত অধিকাংশদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন থানায় চুরির একাধিক,অস্ত্র এবং মাদকসহ একধিক মামলা রয়েছে।
Leave a Reply