বার্তা ডেস্ক :
১৯৮৬র পর ২০২২; ৩৬ বছরের খরা কাটালো আর্জেন্টিনা। কাতার বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হলো লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। দোহার লুসাইল আইকোনিক স্টেডিয়ামে হাইভোল্টেইজ ফাইনাল নির্ধারিত এবং অতিরিক্ত সময়ে ৩-৩ গোলে ড্র থাকার পর; টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে ৪-২ গোলে হারিয়েছে ম্যারাডোনা-মেসির দেশ। ইংল্যান্ডের জিওফ হাস্টের পর বিশ্বকাপ ফুটবলে দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ফাইনালে হ্যাটট্রিক করে গোল্ডেন বুট জিতেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। দেশকে বিশ্বকাপ উপহার দিয়ে সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি।দোহার আকাশে আলোর রোশনাই। উৎসব বুয়েন্স আয়ার্সে। উল্লাস ঢাকার রাস্তায়। আর্জেন্টিনা থেকে কাতার। রোজারিও থেকে বাংলাদেশ। বিশ্বের আনাচে কানাচে একটাই রব- আর্জেন্টিনা। অপেক্ষার প্রহর ফুরোলো। তৃতীয়বার বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনার। অবশেষে মেসির হাতে সোনালী ট্রফি।
ফুটবলে দেশা-দেশি নেই, ভাষা একটাই-সেটা ফুটবল। আধুনিক ফুটবলের মোজার্ট তিনি। বল পায়ে উঠে ট্যাঙ্গো নাচের ছন্দ। পায়ের ছন্দে ফুটবলের মূর্ছনায় গত দেড় দশক বিশ্বকে মাতিয়ে রেখেছেন তিনি। শেষ বিশ্বকাপ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার শেষ পদচারণা। স্প্যানিশ থেকে পর্তুগিজ, ইংলিশ থেকে বাংলা, উচ্চারিত হচ্ছে একটাই নাম- মেসি।
প্রতিপক্ষ গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। মেসির সঙ্গে এমবাপ্পে পাল্লা দিচ্ছেন সমানে সমান। কিন্তু শিরোপায় বিভোর আর্জেন্টিনা। নিজেদের শৌর্যে্যর, নিজেদের সামর্থের পুরোটাই যেন রাখা শিরোপার মঞ্চের জন্য। শুরু থেকে আক্রমণের জোয়ার-ভেসে যাওয়ার অবস্থা ফ্রান্সের।ফাইনাল মঞ্চে স্কালোনির মাস্টার স্ট্রোক। একাদশে ডি মারিয়া। তার একটা দুর্দান্ত ইনসাইড ডজ। লা ব্লুজ ডি বক্সে ফাউল। পেনাল্টির বাঁশি। স্কোরশিটে নাম উঠলো মেসির। আসরে ষষ্ঠ গোল। পেছনে পড়লেন এমবাপ্পে। আর্জেন্টিনার খুঁদে জাদুকর ছুঁলেন বিশ্বকাপে পেলের ১২ গোলের রেকর্ড।
স্কালোনির আর্জেন্টিনা অনেক বেশি কৌশলী। আক্রমণে যেমন পাল্টা আক্রমণেও দুর্বার। ম্যাচের কাউন্টার আক্রমণে আকাশী-সাদা। এবার রঙ্গমঞ্চে হাজির আনহেল ডি মারিয়া। ৩৫ মিনিটে তার গোলে লিড ডাবল।
বিশ্বকাপ ফাইনাল। ফ্রান্সের ট্রফি দুই, আর্জেন্টিনার দুই। এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দুই দলের। লড়াইয়ের মাঝে লড়াই - মেসি ভার্সেস এমবাপ্পে। সমান গোল নিয়ে গোল্ডেন বুটের লড়াই। প্রথমার্ধে এগিয়ে মেসি। দ্বিতীয়ার্ধে এমবাপ্পের ঝলক। তাও একবার নয় দুইবার।
যেন প্রথমার্ধের অ্যাকশন রিপ্লে। পার্থক্য শুধু আর্জেন্টিনার বদলে সময়টা ফ্রান্সের। বদলে গেলো নায়ক। মেসির বদলে এমবাপ্পে। প্রথম গোলটি পেনাল্টি থেকে। মেসিকে ছুঁলেন এমবাপ্পে।
৭৯ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচে এগিয়ে আকাশী-সাদা। পরের দুই মিনিটে সমতা। এবার ডি মারিয়ার অ্যাকশন রিপ্লে। গোলের লড়াইয়ে এগিয়ে গেলেন ফ্রান্সের ওয়ান্ডারবয়।
ফাইনাল হলো ফাইনালের মতো। অতিরিক্ত সময়েও জমজমাট লড়াই। অসাধারণ আক্রমণ। পরক্ষণে ক্ষুরধার পাল্টা আক্রমণ। প্রথমার্ধ শেষ। ১০৮ মিনিটে আরেকবার মেসি ঝলক। শেষ বিশ্বকাপে নিজেকে উজার করা পারফরমেন্স এলএম টেনের। তার গোলে শিরোপা সুবাস পাচ্ছে আলবিসেলেস্তেরা। স্বপ্নে বিভোর মেসি- আকাশী সাদারা।কিন্তু না। বিশ্বকাপ মায়ামৃগ। এত সহজে কি ধরা দেয়? রোমাঞ্চে ভরা চিত্রনাট্যের তখনও শেষ অঙ্কের বাকি। আকাশী-সাদা ডি বক্সে হ্যান্ডবল। পেনাল্টির বাশি রেফারির। এমবাপ্পের হ্যাট্রিক। ম্যাচে সমতা। গোলের লড়াইয়ে আবারো এগিয়ে এমবাপ্পে।
ক্লাসিক ফাইনাল। গোলের ফাইনাল। এমবাপ্পে জাদুর ফাইনাল। মেসির অমরত্বের ফাইনাল। ১২০ মিনিটে যার মিমাংসা হয়না। সেই ফাইনাল টাইব্রেকার ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়াই সবচেয়ে উপযুক্ত।
সমতা ভাঙার লটারিতে গোল পেলেন এমবাপ্পে। গোল করলেন মেসিও।
তবে আর্জেন্টিনার একজন আছেন- এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। গোলবারের অতন্দ্র প্রহরী। টাইব্রেকার জয়ের নায়ক। ফেরালেন একটি। তার আত্মবিশ্বাসে আরেকটি বল গেলো মাঠের বাইরে। শেষ শটে মন্তিয়েলের লক্ষ্যভেদ।
৩৬ বছর আগে দিয়েগো ম্যারাডোনার হাতে শেষবার উঠেছিল সোনালী ট্রফি। উত্তর প্রজন্মের সাফল্যের আশায় আশায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন আর্জেন্টিনার ফুটবল ঈশ্বর। ওপার থেকে নিশ্চয়ই আনন্দে নাচছেন এল লোকো ম্যারাডোনা। শিরোপা যে মেসির-শিরোপা যে আর্জেন্টিনার।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ গোলাম কিবরিয়া / ই-মেইল :daliysomoyaralo24info@gamil.com --(জাতীয় দৈনিক সময়ের আলো প্রিন্ট পত্রিকার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই)
দৈনিক সময়ের আলো ২৪ডট কম