নাসিরনগর,ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নে উচ্চ আদালত ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে দুটি ইটভাটার সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইটের ভাটা দুটির পাশেই রয়েছে শতবছরের পুরোনো হরিপুর জমিদার বাড়ি, ঐতিহ্যবাহী তিতাস নদী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ফলে বায়ু ও পরিবেশ দূষণসহ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির হুমকিতে পড়েছে স্থানীয়রা।
স্থানীয় একজনের আবেদনের প্রেক্ষিতে দুই বছর আগেই পরিবেশ অধিদপ্তর ইটভাটা দুটি বন্ধের নির্দেশ দেয়। সম্প্রতি উচ্চ আদালতও তাদের কার্যক্রম বন্ধের নিদের্শ দিয়েছেন। কিন্তু ভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় এক যুগ আগে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামে মেসার্স নিউ রয়েল নামে একটি ইটভাটা নির্মাণ করা হয়। এর কিছুদিন পর একই স্থানে ফসলি জমির ওপর মেসার্স সততা ব্রিক্স নামে আরেকটি ইটভাটা নির্মাণ করা হয়। নিউ রয়েলের মালিক রেবতি মোহন দেব ও সততা ব্রিকস এর মালিক ইকবাল আহসান।
আরও জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে সঠিক নিয়ম মেনে ভাটা কার্যক্রম না করায় ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট মামলা দিয়ে এক নোটিশের মাধ্যমে ভাটা দুটি থেকে এক লাখ করে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়। নোটিশের আদেশে উল্লেখ করা হয়, বায়ু ও পরিবেশকে দূষিত করায় এক লাখ করে ক্ষতিপূরণসহ আগামী ছয় মাসের মধ্যে ভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
এদিকে ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর ইটভাটার কারণে পরিবেশ দূষণ ও আবহাওয়ার ওপর বিরূপ প্রভাব নিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের ১০২ নং অনুচ্ছেদ মোতাবেক সংক্ষুব্ধ হয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট-পিটিশন দায়ের করেন মো. আওয়াল মিয়া।
পিটিশনের আলোকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি কে এ কামরুল কাদের ও বিচারপতি মো. শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ ২০২৩ সালের ৫ মে ভাটা কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ প্রদান করেন। পরে ভাটার মালিক পক্ষরা আপিল করলে একই বিচারপতিরা এ বছরের ৮ আগস্ট স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ প্রদান করেন এবং ইট প্রস্তুতসহ কোনো প্রকার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না বলেও আদেশে উল্লেখ করেন। কিন্তু ভাটা মালিকরা আদালতের আদেশ অমান্য করে ইট প্রস্তুতসহ বিভিন্ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
হরিপুর ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জগদীশ সাহা বলেন, যে জায়গায় ইটভাটা দুটি নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে সবুজ ভূমি ছিল। প্রতিবছর দুবার ফসল ফলানো হতো। প্রায় ৩০ বিঘা জমি স্থানীয়দের কাছ থেকে লীজ নিয়ে ভাটার কাজ চালানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সততা ব্রিকসের পরিচালক মো. বিল্লাল মিয়া বলেন, ‘একটা পক্ষ পরিকল্পিতভাবে আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে এবং বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। গতবছর পর্যন্ত আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছিল। এ ছাড়া অন্যান্য কাগজপত্র আমাদের কাছে আছে। কিছুদিন আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আমাদের এখান থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে। এখানে আমাদের কোটি টাকার ব্যবসা। চাইলেই হুট করে বন্ধ করা যায় না। প্রয়োজনে আমরা আবার সময় চাইব।’
হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ফারুক মিয়া বলেন, ইটের ভাটাগুলোর কারণে কারোর বাড়িঘর কিংবা পরিবেশের কোনোরকম ক্ষতি হয়েছে বলে আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। সরকারি বিদ্যালয় ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশেই ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে এমন তথ্য আমার জানা নেই। তবে ইটের ভাটার কারণে সারা দেশেই পরিবেশের কিছু ক্ষতি হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খালেদ হাসান বলেন, আমরা আমাদের জায়গা থেকে যা যা করণীয় সবই করছি। এই দুটি ইটভাটাকে আরও আগেই অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
Leave a Reply