অনলাইন ডেস্ক: বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আচ্ছা তার (তারেক জিয়া) মা এত অসুস্থ, আপনারা অনশন করেন। তাহলে ছেলে কেন মাকে দেখতে আসে না, এটা কেমন ছেলে।
শনিবার (১৪ অক্টোবর) বিকাল ৫টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে রাজধানীর কাওলায় আয়োজিত জনসমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মা এত অসুস্থ, মরে মরে।সে (বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া) নাকি যখন তখন মারা যাবে। হ্যাঁ, কারণ বয়স হয়েছে, অসুস্থও বটে। তাহলে মাকে দেখতে আসে না কেন। আমি তো বলব-সে তার মাকে দেখতে আসুক।নির্বাচন হবেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দেবে। উন্নয়ন চাইলে নৌকা মার্কায় দেন। ধ্বংস চাইলে বিএনপি। শুধু আওয়ামী লীগই গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে পারে।
দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রাম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায়। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আপনারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আন্দোলন চালিয়েছেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে নিজেকে আবার প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই ভোট চুরির অপরাধে এই দেশের মানুষ কখনো ভোট চোরকে ক্ষমতায় থাকতে দেয় না। সেই অপরাধে তাঁকে দেড় মাসের মধ্যে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করেছি। সেই আন্দোলন আপনারা চালিয়েছেন। ’
বিএনপির দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অর্থপাচারের কারণে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সেই সময় মুচলেকা দিয়ে খালেদা জিয়ার ছেলে বিদেশে পালিয়ে যায়। যে নাকি জীবনে আর রাজনীতি করবে না। কিন্তু যে টাকা সে পাচার করেছে সেই মামলায় এফবিআই সাক্ষ্য দিয়ে গিয়েছিল। সে ওই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তাদের ব্যবসা ছিল অস্ত্র চোরাকারবার, অর্থ পাচার। ’
বিএনপি ভোট কারচুপি করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অনেক সংগ্রাম করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। গণতান্ত্রিক ধারা থাকলে পরে একটা দেশের উন্নতি হয়, আর গণতান্ত্রিক ধারা যারা বিশ্বাস করে তারা ক্ষমতায় থাকলে দেশের যে উন্নয়ন হয় সেটা আজকে প্রমাণিত। ’
২০০১ সালে দেশের সম্পদ বিক্রির মুচলেকা দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব আমার কাছেও এসেছিল। বলেছিলাম আমি শেখ মুজিবের মেয়ে দেশের স্বার্থ কখনো বেচি না। ক্ষমতার লোভ আমার নেই। খালেদা জিয়া এসে গ্যাসতো দিতেই পারেনি উল্টো বাংলাদেশকে পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছে। আর নিজে বিদেশ থেকে টাকা এসেছিল এতিমখানার জন্য, এতিম একটা টাকাও পায়নি, সব টাকা মেরে দিয়েছে। ’
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার নাইকো দুর্নীতি মামলার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে কানাডার পুলিশ এবং আমেরিকা থেকে গোয়েন্দা সংস্থার লোক আসার জন্য তৈরি। যখনই তারা আসতে বলে তখনই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছিল। ক্ষমতায় থাকতে সে বলেছিল, আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বলেছিল শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী দূরে থাক বিরোধী দলীয় নেতাও হতে পারবেন না। আল্লার মাইর দুনিয়ার বাইর—এখন তিনি না প্রধানমন্ত্রী, না বিরোধী দলীয় নেত্রী। কিছু হতে পারেননি। কিন্তু দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁর বড়বোন, বোনের জামাই, ভাই আমার সঙ্গে গণভবনে দেখা করতে আসে। কান্নাকাটি করে। সরকার প্রধান হিসেবে আমি যতটুকু ক্ষমতা করি। যদিও ক্ষমতায় থাকতে আমাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা, কোটালিপাড়ায় বোমা পুতে রাখা, বারবার হামলা করেছিল। যখন সে এক একটা বক্তৃতা দিয়েছে তারপরেই হামলা হয়েছে। আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছে। নেতা-কর্মীরা জীবন দিয়ে রক্ষা করেছে। আমি তাঁকে বাসা থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ’
এর আগে দুপুর থেকেই জনসভায় নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেন কাওলা মাঠে। বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের উদ্বোধনের দিন এ সমাবেশ করার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে তারিখ পরিবর্তন করা হয়।
আজকের সমাবেশ ঘিরে সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে হাজির হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরের বিভিন্ন শাখা ও ইউনিট থেকে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছেন কাওলা মাঠে। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই জনসভাস্থল নেতাকর্মীতে ভরে যায়। সমাবেশ মঞ্চে পৌঁছলে নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে স্লোগানে স্লোগানে স্বাগত জানান। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতিও নেতা-কর্মীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।
Leave a Reply