মোঃ মিন্টু শেখ : নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা বিষয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় সাতক্ষীরা জেলার সিভিল সার্জন ডা. শেখ সুফিয়ান রুস্তমকে বদলি করেছিলো স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
স্বাস্থ্য বিভাগের সাতক্ষীরা জেলায় ১৬ থেকে ২০ গ্রেডের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর একটি নিয়োগে স্থানীয় তৎকালীন এমপি, রাজনৈতিক নেতা ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অনৈতিক দাবি না রাখায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী ডা. শেখ সুফিয়ান রুস্তম। ফ্যাসিস্ট সরকারের ওই সকল কর্তৃত্ববাদী নেতা আমলাদের প্রায় ৩০ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করতে বড় বাধা হয়েছিলেন তিনি, করে ছিলেন তীব্র প্রতিবাদ।
এ কারণেই সিভিল সার্জন হিসাবে দায়িত্ব পাওয়ার মাত্র সাত মাসের মধ্যে কোন অভিযোগ না থাকা সত্বেও তড়িঘড়ি করে চলতি বছরের গত ২৮ এপ্রিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজের আদেশ দেয়া হয়। ওই আদেশে তাকে সাতক্ষীরা জেলার সিভিল সার্জনের পদ থেকে ভোলার জেলার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সহকারী পরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়। যোগ্য আর মেধাবীদের নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিয়োগে বাহবার পরিবর্তে পেতে হয় শাস্তিমূলক বদলির আদেশ।
ডাঃ শেখ সুফিয়ান রুস্তম বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরাসরি মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বলেন, “আমার সরকারি চাকরি কোন কোঠা বা কারোর বাবার দেওয়া কৃপা নয় বরং আমার মেধা ও যোগ্যতার স্বীকৃতি, তাই আমি অবশ্যই আমার সন্তানদের সাথে তাদের পাশেই রাজপথে আছি এবং থাকবো। এ জন্যও তাকে নানাভাবে হয়রানি ও হুমকিও প্রদান করেছিলো সংশ্লিষ্ট বিভাগের কিছু মানুষ।
এর আগে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এবং ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘ইউ এইচ এফ পি ও’ হিসাবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এ বিষয়ে ডাঃ শেখ সুফিয়ান রুস্তম বলেন, ভালোভাবে কাজ করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মূখিন হতে হয়েছে। তবুও সঠিক কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এক শ্রেণীর সুবিধাভোগি যারা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ হওয়া অর্থ লুটপাট করে খেয়েছেন। স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করেছেন। আমার মতো যারা এসবের বিরুদ্ধে কথা বলার চেষ্টা করেছেন তারাই ভিষণভাবে বৈষ্যমের শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, দেশ এখন বৈষ্যমমুক্ত হয়েছে। আশা করছি পুর্বের এসকল অপকর্মের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে চিহিৃত করে দ্রুতই বিচার ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে ।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৮ মে স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনস্ত সাতক্ষীরা জেলার স্বাস্থ্যখাতের সদর হাসপাতাল ও সাতটি উপজেলাতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর মোট ১২৮ জনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনের দপ্তর ওই নিয়োগের কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। তবে নিয়োগের পুর্বেই সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই নিয়োগ নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক তদ্ববির বানিজ্য। তৎকালীন সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ সুফিয়ান রুস্তমকে ওই সকল প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যাক্তি ও আমলারা নিজের পছন্দের প্রার্থীদের লিষ্ট প্রদান করতে থাকেন একই সঙ্গে রেট বসিয়ে চালাতে থাকেন কোটি কোটি টাকার লেনদেন। এতে অনেকটাই বিরক্ত ও বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়েন সিভিল সার্জন।
তিনি এসকল তদ্ববিরে ও প্রভাবে নত না হয়ে সঠিক পন্থায় নিয়োগের কার্যক্রম সম্পন্ন করায় তার ওপরে নেমে আসে চরম থাবা। প্রভাবশালীরা যে যার অবস্থান থেকে তাকে হেনস্থা করতে শুরু করেন। তাদের নিয়োগ বাণিজ্যে তোলা প্রায় ৩০ কোটি টাকার দায়ভারও চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় সিভিল সার্জনের ওপরে। কোন কিছু না পেরে সর্বশেষ তাকে সাতক্ষীরা জেলার সিভিল সার্জনের পদ থেকে সহকারী পরিচালক করে ভোলায় বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয়। নিয়োগ প্রাপ্ত প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতাও পাওয়া গেছে।
Leave a Reply